পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৭ তৃতীয় অধ্যায় : বৈদ্য ও কায়স্থাদি বংশ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত বিবরণ আমরা প্রাপ্ত হই নাই। স্বামী বংশে পূৰ্ব্বে অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন বলিয়া শোনা যায়। কথিত আছে অতি পূৰ্ব্বে ইহাদের কাহারও গৃহে অলক্ষ্যে দুইটা “বনমানুষ” প্রবেশ করিয়া অন্নাদি যাহা রন্ধন পাত্রে অবশিষ্ট থাকিত, তৎসমস্তই খাইয়া যাইত। প্রায় প্রত্যহই এইরূপ ঘটিত, ইহাতে উত্ত্যক্ত হইয়া গৃহস্বামী একদিন গোপন ভাবে থাকিয়া চোরের প্রতীক্ষা করেন নিয়মিত সময়ে চোর আসিল, গৃহস্বামী দেখিলেন যে র্তাহার অন্নচোর মানুষ নহে—বনমানুষ তখন তিনি লগুর দ্বারা আক্রমণ পূৰ্ব্বক একটিকে প্রাণে বধ করিলেন, অন্যটি পলাইল। সেই হইতে না কি তাহাদের অবস্থাব পরিবর্তন ঘটে, এবং ইহা না কি বনমানুষের অভিশাপের অথবা তাহার হত্যাপরাধের ফল। আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল না থাকিলেও ইদানীন্তন কালে স্বামী বংশে গুরুপ্রসাদ ও তৎপুত্র গোকুলরাম স্বামী বড়ই উদার ও প্রশস্তমনা পুরুষ ছিলেন, গোকুলরামের জ্যেষ্ঠপুত্র গোপীচরণ স্বামী:ইহার কনিষ্ঠ সহোদর স্বচেষ্টায় অবস্থার অনেকটা উন্নতি বিধান করিয়াছেন। স্বামী বংশে স্বপ্রতিষ্ঠিত স্বগীয় রমণীমোহন স্বামীর নাম উল্লেখযোগ্য; শুধু নিজ চেষ্টায় কিরূপে খ্যাতি-প্রতিপতি ও সম্পত্তি উপাজ্জিত হইতে পারে, রমণীবাবু তাহা প্রদশিত করিয়া গিয়াছেন। অষ্টপতি বংশ অষ্টপতি বংশের আদিপুরুষ কাছাড়-পতির একজন উচ্চ কৰ্ম্মচারী ছিলেন বলিয়া “কুলাঞ্জলী” গ্রন্থে পাওয়া যায়;ইনি একজন কুলীন কায়স্থ সন্তান ছিলেন। ইটার রাজা সুবিদনারায়ণের রাজ্য বিলোপ-বাৰ্ত্তা পূৰ্ব্বাংশে বর্ণিত হইয়াছে, ইনি রাজা সুবিদনারায়ণের মন্ত্রী উমানন্দের অনুগত ছিলেন;এবং তাহারই সম্প্রদায় ভুক্ত বলিয়া সা। সাউ-সমাজের অন্যতম অগ্রণীরূপে গণ্য হয়। এ বংশে ৬ষ্ঠ পুরুষ উদ্ধে লালা রূপচরণ নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, তাহার পুত্রের নাম ভোলানাথ; লালা ভোলানাথের চারিপুত্র ছিল, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ লালা মহেশরাম ও ২য পুত্র গণেশরামের বংশ আছে অপর পুত্র সোণারাম ও গোপীরাম নিঃসন্তান পরলোকগামী হন। লালা মহেশরামেব তিন পুত্র তিনজনই প্রসিদ্ধ। ইহাদের নাম গৌরীচরণ, শ্যামচরণ, ও যুগলচরণ। গৌরীচরণ মুন্সেফীর উকীল ছিলেন, কিন্তু জ্ঞান, বুদ্ধি ও ধৰ্ম্ম প্রভাবে তিনি অতি উচ্চ শ্রেণীর মনুষ্য মধ্যে পরিগণিত হইয়াছেন। তাহার তুল্য মনুষ্য ইদানীং দৃষ্ট হয় না, ৪র্থ ভাগে তাহার জীবন চরিত্র সম্বন্ধে ২/৪টি কথা বলা যাইবে। চৈতন্যচরণ, বৈষ্ণবচরণ ও গুরুচরণ নামে র্তাহার তিন পুত্র হয়, তিন পুত্রই তিন রত্নস্বরূপ ছিলেন। চৈতন্যচরণ লস্করপুরের মুন্সেফ ছিলেন;বৈষ্ণবচরণ ঢাকা সবজজের পদে উন্নীত হন;গুরুচরণ কৃষ্ণনগরের সবজজ পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। শ্যামচরণ প্রাচীন “মীর মোনশী” পদে ছিলেন এবং যুগলচরণ মুন্সেফার নাজির ছিলেন। শ্যামচরণ মোনশীর পুত্র কন্যার সংখ্যা দশজন; তন্মধ্যে স্বগীয় প্যারীচরণ দাস একজন কবি ছিলেন। শ্রীহট্ট প্রকাশ পত্রিকা শ্রীহট্ট হইতে তিনিই প্রকাশ করিয়া স্বয়ং তাহার সম্পাদন করেন, ৪র্থ ভাগে ইহার জীবন-চরিত ঘটিত কথা উক্ত হইবে। ইহার ৪র্থ সহোদর শ্রীশ চন্দ্র কৃত “তত্ত্ববিলাস” নামক এক গ্রন্থ আছে। র্তাহার কনিষ্ঠ সহোদর সবডিবপুটী কালেক্টর শ্ৰীযুক্ত প্রদ্যুন্মচরণ দাস জীবিত আছেন। নাজির যুগলচরণের পুত্র অচ্যুতচরণ দাসও নাজিরের পদে ছিলেন। ইহার অনুজভ্রাতা স্বগীয বিশ্বম্ভরচরণ কৃত "দলিলাবালী” ও “পত্রমালা” বহুকাল শ্রীহট্টের পাঠশালা সমূহের পাঠ্য ছিল। পূৰ্ব্বোত্ত গণেশ রামের জ্যেষ্ঠ পুত্রের না ভবানীচবণ, ইহার পুত্র লাতুর অন্যতম মিরাশদার শ্রীযুক্ত বৈকুণ্ঠচরণ দাস বৰ্ত্তমান আছেন।