পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৭ চতুর্থ অধ্যায় ; বড়লিখার পুরকায়স্থ কথা এবং প্রতাপগডের বিবরণ এ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত প্রতাপগড়ের সরকার বংশ প্রতাপগড়ের বিবরণ সংসৃষ্ট বলিয়া জফরগড়ের মৈনা নিবাসী চৌধুরী বংশ বৃত্তান্ত এইমাত্র বর্ণন করিয়াছি। যে দুইটি বংশীয়, জমিদারবর্গ প্রতাপগড়ের প্রথমধিকার চিলেন, তাহদের প্রসঙ্গ পূবর্বাংশেই বিস্তাবিতভাবে যথাস্থানে বিবৃত করা গিযাছে। সে দুইটি বংশের মধ্যে অন্যতম হিন্দু জমিদারদের কৰ্ম্মচারীরূপে বর্ণয়িতব্য সরকার বংশের প্রসিদ্ধি। আট পুরুষ পূৰ্ব্বে পঞ্চ খণ্ডের সুপাতলা গ্রামে সাহু কুলোৎপন্ন জগন্নাথ দাস নামক এক ব্যক্তি ছিলেন, ইহার পুত্রের নাম নবিরাম বা নবীন। নবিরামের বারাণসী ও সন্ধী নামে দুই পুত্র হয়। নবি ও বারাণসী উভযই ধনাজ্জনে প্রসিদ্ধ হইয়া উঠেন, ইহাদের নামে তাহাদের বংশীয়বর্গ অদ্যাপি পরিচিত হইয়া থাকেন। কবি সত্যরাম বারাণসীর পুত্র শোভারাম। শোভারামের পুত্র সত্যরাম পারস্য ও সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন, তাহার কবিত্ব শক্তিও ছিল। তিনি একদা কাৰ্য্যান্বেষী হইয়া কাছাড়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নারায়ণের সভায় গমন কবেন, মহাবাজ তাহার পাণ্ডিত্য ও বুদ্ধির পরিচয় পাইয়া তাহাকে রাজ্যের দেওযান নিযুক্ত করেন; সত্যরাম রাজানুগ্রহে প্রসিদ্ধ ও ধনী হইয়া উঠেন। রাজ-কাৰ্য্যানুরোধে সৰ্ব্বদাই তাহাকে কাছাড়ে থাকিতে হইত, বাড়ী যাইবার অবকাশ ছিল না। এতাদৃশ গুরুতর কাৰ্য্যে থাকিয়াও তিনি বঙ্গভাষার সেবায় ক্রটি কবেন নাই, তাহার কৃত অনেক “ধুয়া” বা “ধুরা” আছে। তদ্ব্যতীত তিনি “ঘাটু সঙ্গীত” রচনা করিয়া ছিলেন।” সত্যরাম বহুদিন বাড়ীতে আসিতে কি, বাড়ীর বিশেষ তত্ত্বাবধান নিতে না পারায়, এদেশে তিনি আসিবেন না বলিয়াই প্রতিবেশীবগের ধারণা জন্মে। এই ধারণা ক্রমে লোকের মধ্যে দৃঢ়তর হইয়া যায, তাহাতে দেশে তাহার যে জমি ভূমি ছিল, পঞ্চখণ্ডের জনৈক জমিদার বলে তাহার কিয়দং আত্মসাৎ করেন। সত্যরামের পুত্র কুশরাম তখন বালক মাত্র, তিনি স্বয়ং কোন প্রতিকার করিতে না পারিয়া কাছাড়ে গিয়া পিতার নিকট একথা বলিলেন। তেজস্বী সত্যরাম পুত্রকে অপদার্থ মনে করিয়া অত্যন্ত ভৎসনা করেন তদ্রুপ অযোগ্য পুত্র থাকা না থাকা সমান, ইত্যাকার বাক্যে বালককে প্রপীড়িত করেন। বালক পিতৃবাক্যে জৰ্জ্জরিত হইয়া, কাছাড় ত্যাগ করিল, কিন্তু আর বাড়ীতে গেল না, প্রতাপগড়ে আসিয়া উপস্থিত হইল। প্রতাপগড়ে তখন নবাব রাধারামের প্রচণ্ড প্রতাপ।” রাধারাম একজন দক্ষ কৰ্ম্মচারীর সন্ধান করিতেছিলেন, কাছাড়ের দেওয়ান বা মন্ত্রীপুত্রকে পাইয়া তিনি সাগ্রহে আশ্রয় দিলেন, জমিবাড়ী দান করিয়া আপন দফতর ২৯ বৈষ্ণব মহোৎসবে ভোজনকালে যে সকল পদাবলী মধ্যে মধ্যে উচ্চারিত হয, তাহা ধুযা বা ধুবা নামে খ্যাত। “ঘাটসঙ্গীত” বাধাকৃষ্ণ লীলাত্মক গান। শ্রীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন কৃত “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” গ্রন্থে কবি সত্যবামের যে ঘাটুসঙ্গীত উদ্ধত হইযাছে, তাহা একিবিকৃত বলিযাই বোধ হয়। ৩০ শ্রীহট্রেব ইতিবৃত্ত পুৰ্ব্বাংশ ২য ভাগ ২য খণ্ড ১১শ অধ্যায় দেখ।