পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত প্রেরণ করিলেন, এই প্রহেলিকা-বাক্য শ্রবণে শ্রীচৈতন্যদেব ঈষদ্বাস্য পূৰ্ব্বক তৃষ্ণস্তুত হইয়া রহিলেন। ভক্তবর্গ এই গুঢ়াৰ্থবোধক বাক্যের অর্থ পরিগ্রহ করিতে না পারিয়া শ্ৰীমহাপ্রভুকে তাহার তাৎপৰ্য্য জিজ্ঞাসিলে তিনি বলিয়াছিলেন, “আচাৰ্য্য তন্ত্রজ্ঞ পুজক, তিনি দেবতার আবাহন করিয়া পুনঃ যথা সময়ে বিষৰ্জ্জন করিয়া থাকেন, তাহার কথার অর্থ তিনিই বুঝেন।” ইহার পর হইতেই শ্ৰীমহাপ্রভুর ভাব অন্যরূপ হইল, তিনি একরূপ বাহা জ্ঞান বিরহিত হইয়াই সৰ্ব্বদা থাকিতেন; এবং তদবস্থায় অপ্রকট হন। অপ্রকটের পর প্রহেলীর অর্থ ভক্তবর্গ বুঝিতে পারিয়াছিলেন; এই প্রহেলিক তদীয় লীলা সম্বরণের জন্য ইঙ্গিত মাত্র। অবতার বলিয়া পুজিত। এই মত যে পরবর্তী কালে অদ্বৈত—ভক্ত কত্ত্বক পরিকল্পিত হয়, তাহা নহে শ্ৰীমহপ্রভুর অন্তরঙ্গ অনুচর স্বরূপ গোস্বামী এই মতের উদ্ভাবক। বঙ্গীয় বৈষ্ণব সমাজে ভাব ও শক্তি বিশেষের অবতরণ স্বীকৃত হইয়াছে। কৰ্ম্মবশে অনশ্বর আত্মার জন্মান্তর গ্রহণের ন্যায় মুক্তপুরুষ বা দেবতার স্বেচ্ছতঃ দেহধারণও স্বীকৃত হয়। সে যাহা হউক, শ্রীহট্টবাসী অদ্বৈতাচাৰ্য বৈষ্ণব জগতে মহাবিষ্ণু বা মহাদেবের অবতার রূপে পূজিত হইতেছেন, ইহা শ্রীহট্টবাসিগণের কম গৌরবের কথা নহে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তৰ্দ্ধানের পরও অনেক দিন অদ্বৈত জীবিত ছিলেন, কিন্তু ঐ সময় তাহার বাহ্য জ্ঞান প্রায় ছিল না; অভ্যাস বশেই স্নানাহার করিতেন। অদ্বৈত-প্রেরিত পূৰ্ব্বোক্ত প্রহেলিকাপদ্য প্রাপ্তির পর শ্ৰীমহাপ্রভুর শেষ কয়েক বৎসর যেমন কৃষ্ণবিরহে বাহ্যজ্ঞান বিহীন ছিলেন, অদ্বৈতও তেমনি শেষ কয়েক বৎসর গৌর-বিরহে বিহুল ছিলেন ও তদবস্থায় শতাব্দজীবী" শিবাবতার অদ্বৈতাচার্য অপ্রকট হন। আনন্দরাম চক্রবর্তী আনন্দরাম চক্রবর্তী সাধারণতঃ আনন্দীকবি নামে খ্যাত। ইহার জীবিত কাল ১৭৭০ হইতে ১৮৪০ বাউলকে কহিও হাটে না বিকায় চাউল। বাউলকে কহিও কাজে নাহিক আউল। বাউলকে কহিও ইহা করিয়াছে বাউল।" পণ্ডিত রামনারায়ণ বিদ্যারত্ন ইহার এই অর্থকরিয়াছেন যে, কৃষ্ণ প্রেমোন্মত্তকে (শ্ৰী মহাপ্রভুকে) বলিও—লোক কৃষ্ণ প্রেমে উন্মত্ত হইয়াছে আর কেহ বাকী নাই যে কৃষ্ণ প্রেম নিবে—প্রেম আববিকায় না। আর বলিও যে এই প্রেম বিতরণ কর্যে কোন ত্রুটি হয় নাই। আর পাগল অদ্বৈতই ইহার বক্তা। (পাগল বাতীত কে নিদারুণ বিদায়ের কথা ইঙ্গিত করিতে পারে?) ২৫ প্রেম বিলাসে লিখিত আছে শ্ৰীমহাপ্রভুর অন্তৰ্দ্ধানের চারিবৎসব পরে অর্থাৎ ১৫৩৭ খৃষ্টাব্দে ১০৩ বৎসর বয়সে তিনি স্বধান গমন করেন। কিন্তু অদ্বৈত প্রকাশ মতে তাহার অপ্রকট কাল ১২৫ বৎসর যথা:– "সওয়াশত বর্ষ প্ৰভু রহি ধরা ধামে। অনন্ত অৰ্ব্বদ লীলা কৈলা যথা কালে।” এত দীর্ঘকালও যে লোক বঁচিতে পারে, ইহাব উদাহরণ এখনও একদা অপ্রাপ্য নহে। তাহা হইলে ১৫৫৮ খৃষ্টাব্দে তাঙ্গার অশুদ্ধান কাল বলিতে হয়।