পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪০ মুক্ত হস্ত ছিলেন। তিনি “গিরীশ বঙ্গ বিদ্যালয়” ও তৎসংসৃষ্ট সংস্কৃতচতুষ্পাঠী পরিচালন করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, মাতামহের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ও “মুরারিচাদ এন্ট্রাস স্কুল” ও “মুরারিচাদ কলেজ” (১৮৮১ খৃঃ) স্থাপন করিয়া শ্রীহট্টবাসীর উচ্চ শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছেন। “র্তাহার সময়ে তদীয় স্কুল কলেজের প্রায় অৰ্দ্ধেক ছাত্রই বিনা বেতনে ও অল্পবেতনে অধ্যয়ন করিত, তদ্ব্যতীত নিঃসহায ছাত্রদের জন্য মাসিক কয়েকটি বৃত্তি নিৰ্দ্দিষ্ট ছিল।” “রাজা স্ত্রী শিক্ষারও পরম সহায় ছিলেন” এবং নানা রূপে তাহার সাহায্য করিয়া গিয়াছেন । চা-ক্ষেত্র সংস্থাপন একটি ব্যয়সাধ্য উচ্চতর স্বাধীন ব্যবসায়, আসাম প্রদেশে বাঙালীর মধ্যে রাজা গিরীশচন্দ্ৰই সৰ্ব্ব প্রথম চা-বাগান প্রস্তুত করিয়া, ঈদৃশ সম্মানজনক স্বাধীন ব্যবসায়ে সকলের প্রবৃত্তি জন্মাইয়া দেন। ১৩০৫ সনে গিরিশচন্দ্র রাজা উপাধিতে বিভূষিত হন। তদানীন্তন চিফ কমিশনার সার হেনরী কটন মহোদয শ্রীহট্টে আসিয়া প্রকাশ্য দরবারে অতি জাকজমকের সহিত র্তাহাকে রাজোপাধির সনন্দ দান করেন। দরবারান্তে রাজা সমাগত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের আশীৰ্বাদ গ্রহণাস্তে তাহাদিগকে প্রচুর পরিমাণে দানাদি দ্বারা সৎকার করেন। “রাজা গিরীশচন্দ্র লোককে খাওযাইতে বড় ভালবাসিতেন, তাহার ভবনে ভোজের সময় সৰ্ব্বদাই তিনি পংক্তির কাছে নগ্নপদে দণ্ডায়মান থাকিযা পর্যবেক্ষণ ও সম্ভাষণ করিতেন, তাহার বিনীত ব্যবহার ও মিষ্টালাপে সকলেই তুষ্ট হইত।” “হিন্দু, মোসলমান, ব্রাহ্ম, খৃষ্টান প্রভৃতি সকলেব ধৰ্ম্ম কাৰ্য্যেই তিনি অজস্র অর্থ দানে কুণ্ঠীত হইতেন না।” “বিপদে পড়িয়া ক্ষুদ্র ব্যক্তি আশ্রয় চাহিলেও রাজা তাহাকে সাহায্য প্রদান করিতেন, শহরের ধোপাদাঘী একদা গবর্ণমেন্ট দখল করিতে চাহিলে ধোপারা যখন রাজাব আশ্রয় যাএ3া করিল, তাহাদিগকে আশ্বাস দিয়া তিনি বলিলেন যে, তোমরা মোকদ্দমা কর, ধুপাদীঘী তোমাদেরই, ইহা আমি জানি।” মোকদ্দমায় ব্যয় তখনই ১০০ টাকা দিয়া বলিলেন, “দরকার পড়িলে আরও ৫০০ টাকা পৰ্য্যন্ত আমি দিতে স্বীকৃত আছি।” ফলতঃ রাজার অনুগ্রহে ধোপারা ধোপাদীিঘীর অধিকার লাভে সমর্থ হইয়াছিল।” “রাজা বিধবাদের জন্য সৰ্ব্বদাই দুঃখ করিতেন।” যদি বিধবারা পবিত্রভাবে জীবন যাত্রা নিববাহের কোন উপায় অনুষ্ঠিত হয়, অথবা নিরাশ্রয় বিধবাদের জন্য “একটি বিধবাশ্রম হয়, তবে তিনি ৫০০০ সহস্র টাকা দান করিতে” প্রস্তুত ছিলেন। প্রাতঃকালে মাতাকে প্রণাম না করিয়া কোন কাজেই যাইতেন না।” “১৮৯৭ খৃষ্টাব্দের ভীয়ণ ভূকম্পের সময় রাজা গিরীশচন্দ্রের সুরম্যপ্রাসাদ ভূমিসাৎ হয়” ৩৮ পূৰ্ব্বেধৰ্ম্মপুর নিবাসী স্বগীয় কৃষ্ণচন্দ্র দাস মহাশয় কর্তৃক “নবাব তালাব বঙ্গ বিদ্যালয়"নামে শ্রীহট্ট শহবে একটি বঙ্গ বিদ্যালয় নবাব তালাব নামক দীঘীব উত্তর তীরে স্থাপিত হইয়া দক্ষতার সহিত পরিচিত হইতেছিল, উহাই ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে গিবীশচন্দ্রের হস্তে ন্যস্ত হয। বলিতে গেলে সেই হইতেই সাধারণ শিক্ষার প্রতি র্তাহাব চিত্ত আকৃষ্ট হইযাছিল। গিরীশচন্দ্রের হাতে গিয়া উহা “গিরীশ বঙ্গ বিদ্যালয়” নামে খ্যাত হয়। পবে উহাই “গিরীশ মহা ইংরেজী স্কুল” রূপে পরিণত হইয়া অদ্যপি চলিতেছে।