পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯ জীবন বৃত্তান্ত a শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত একরাত্রে গৃহে প্রবেশ করিল। বিদেশ হতে যাহারা আসিত, তাহারা প্রায় তাহার গৃহেই রাত্রি যাপন করিত; যখন চোর গৃহে প্রবেশ করিল, তখন সেই ভক্তবর্গ সকলেই নিদ্রাবিভূত, কিন্তু ঘোষঠাকুর স্বয়ং সেই শেষ রাত্রেও ইষ্ট চিন্তায় জাগ্রত রহিয়াছেন। তিনি চোরকে দেখিয়া মনে করিলেন, এ ব্যক্তি আমাকে জাগ্রত জানিলে চলিয়া যাইবে, তাহা হইলে তাহার আগমন ও পরিশ্রম বৃথা হইবে, হায়! সে না জানি কত অভাবগ্রস্ত! এইরূপ ভাবিয়া তিনি চক্ষু মুদ্রিত করিয়া নিদ্রিতবৎ পড়িয়া রহিলেন–যেন চোর নিরুদ্বেগে ইচ্ছানুরূপ দ্রব্যাদি লইতে পারে। কিন্তু ঘটিল বিপরীত, তিনি চক্ষুমুদ্রিত করিলেন বটে, এদিকে দৈববশে চোরের দৃষ্টি শক্তি বিলুপ্ত হইয়া গেল। সে মহা বিভ্রাটে ডাকিলেন—যেন অন্যে শুনিয়া ও জাগ্রত হইয়া গণ্ডগোল ঘটাইতে না পারে। তাহার আহানের সহিত চোরের দৃষ্টিশক্তি পুনঃ সমাগত হইল। চোর তখন আপন অভিসন্ধি ব্যক্ত করিয়া ঠাকুরের চরণে লুটাইয়া পড়িল। এই ঘটনা গুপ্ত রহিল না, এইরূপ আরও বহুতর ঘটনার কথাই তৎসম্বন্ধে শ্রত হওয়া যায় এবং তাহাতে তিনি জনসাধারণ দেববৎ পূজিত হন। তাহার পুত্র পাঁচজন ছিলেন, ইহাদিগকে উপযুক্ত রাখিয়া, যথাকালে তিনি সমাধি যোগে দেহ ত্যাগ করেন। দেহত্যাগ কালে তিনি একটি মশারির ভিতরে পদ্মাসন উপবেশন করিয়াছিলেন এবং তাহার চারি পাশ্বে ভক্তবর্গ কর্তৃক উচ্চ সংকীৰ্ত্তন হইতেছিল। নিরূপিত সমায়ান্তে যখন মশারি উত্থিত হইল, তখন দেখা গেল যে ঘোষ ঠাকুর দিব্য ধামে চলিয়া গিয়াছেন। গিরীশচন্দ্র রায় (রাজা) “১৭৬৬ শকাব্দে ৭ই চৈত্র বুধবার দ্বাদশী তিথিতে ২৩ দণ্ড সময়ে রাজা গিরীশচন্দ্র; শ্রীহট্টের বোয়ালজুর পরগণার চরভুতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাহার জন্মদাতা পিতার নাম দীপচন্দ্র নন্দী চৌধুরী ছিল, রাজা গিরীশচন্দ্রের পূবর্বনাম ব্ৰজগোবিন্দ নন্দী চৌধুরী ছিল।” “যখন তাহার বয়স পাঁচ বৎসর ছিল, তখন সুপ্রসিদ্ধ “বাবু” মুরারি চাদের কন্যা তাহাকে পোষ্যপুত্র রূপে গ্রহণ করেন, তখনই তাহার পূবর্ব নামের পরিবৰ্ত্তে “গিরীশচন্দ্র” এই নাম রাখা হয়। পোষ্য পুত্র রূপে গৃহীত হওয়ায় গিরীশচন্দ্র বিশাল সম্পত্তির অধিকারী হইলেন।” “রাজা ইংরেজী ভাষায় শিক্ষিত না হইলেও, সাহেবদের সঙ্গে আলাপকালে তাহদের কথা সুন্দর রূপে বুঝিতে পারিতেন, সুতরাং ভাল ইংরেজী জানিতেন না বলিয়া তাহার ইহতে কোন অসুবিধাই ঘটিত না। রাজার সহিত দীন দুঃখী ও পথের ভিখারীও আলাপ করিতে পারিত, ইহাদের দুঃখের কথা তিনি বিশেষ আগ্রহ সহকারে শুনিতেন। রাজার শরীর যেমন সুশ্রী বলিষ্ট ছিল, মুখমণ্ডল যেমন প্রতিভা মণ্ডিত ছিল, মনও তেমনি উদার, উচ্চ ও কোমল ছিল; একদিন তাহার সহিত আলাপ করিলে, তদীয় অমায়িকতা ও ভদ্রতায় বিমোহিত হইতে হইত।” দরিদ্রকে দান করিতে তিনি মুক্ত হস্ত ছিলেন, তাহার অধিকাংশ দানই ঢক্কা রবে নিনাদিত না হইয়া সংগোপনে সম্পাদিত হইত, এরূপ অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানের সংখ্যা করা যায় না। দেশের সাধারম লোকে যাহাতে সুশিক্ষা পায় তৎপ্রতি তাহার বিশেষ লক্ষ্য ছিল, এবং এ বিষয়েও তিনি