পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৮ পরিতাপিত হইতেছে, প্ৰভু দেখিতে পাইলেন যে, তখন একটি কৃষক সন্নিকটে চাষ করিতেছে। “জীবে দয়া” যাহার প্রচারিত ধৰ্ম্মের প্রথম সূত্র, তিনি নিরীহ গো-জাতির প্রতি ঈদৃশ অত্যাচার সহ্য করিতে পারিলেন না; জিজ্ঞাসা করিলেন—“কৃষক! তোমার নাম কি? কৃষক উত্তর দিল—“রামদাস।” প্রভু বলিলেন—“ভাইরামদাস! বেলাদ্বিপ্রহর প্রায়, প্রখর রৌদ্র, এখন হালের গরু দুটি ছড়িয়া দাও।” কৃষক কহিল—“আপনার কথা রাখিতে পারিলাম না। আজ আমাকে ক্ষেত্র প্রস্তুত করিতেই হইবে। রৌদ্রে ক্ষেত্র শুষ্ক হইয়া অকৰ্ম্মণ্য হইতেছে।” মহাপ্রভু তখন সখেদে বলিয়া উঠিলেন— “হরি! হরি! একি সবর্বনাশ! ক্ষেত্র নষ্ট হৈবে বলি কর ধৰ্ম্মনাশ!! শ্ৰীমহাপ্রভু আর কিছু বলিলেন না, বলিতে পারিলেন না, তাহার অরবিন্দ ক্ষেত্র বাষ্প পূরিত হইল, দেখিতে দেখিতে বাষ্প ধারাকারে পরিণত হইয়া প্রধাবিত হইল। অজ্ঞ কৃষক এরূপ অদ্ভুত চিত্র জন্মাবধি দেখে নাই, সে এ দৃশ্যে আশ্চর্যান্বিত হইয়া গেল। এ নামের গুণ না ভাগবতী শক্তির অখণ্ড প্রভাব!—শ্ৰীমহাপ্রভুর মুখোচ্চারিত হরিধ্বনি শুনিয়া হালের গরু দুটি উদ্ধ পুচ্ছে ধ্বনি করিতে লাগিল। যেন অব্যক্ত স্বরে হরি বলিয়া উঠিল। এই অত্যাশ্চর্য ব্যাপার বিলোকনে রামা চাষা ভীত হইয়া থরহরি কঁাপিতে লাগিল ও দৌড়িয়া গিয়া শ্রীচৈতন্যের পদপ্রান্তে পতিত হইল। রামার কি সৌভাগ্য, রামা সে রাতুল চরণে স্থান পাইল। শ্ৰীমহাপ্রভু বামাকে হরিনাম উপদেশ দিয়া উদ্ধার করিলেন। রামাকে বলিলেন—“রামা! এই তরু-মূলে তুমি বেদিকা প্রস্তুত করিয়া নিত্য হরি-আরাধনা করিও, হরিনাম গ্রহণ করিও। অশ্বত্থ তলা পবিত্র স্থান ।” রামা তাহাই করিল ও সে সেই স্পর্শমণির স্পর্শে সোনা হইয়া গেল। তাহার বিনয় ভক্তিতে কত লোক আকৃষ্ট হইয়া তথায় আসিত এবং তাহারাও তদীয় প্রভাবে—তাহার অনুষঙ্গে—পবিত্র জীবন লাভ করিত। এই ঘটনায় বুরুঙ্গায় শ্ৰীমহাপ্রভুর একটি নূতন নাম হইল,—রামদয়াল।” ২. “মধ্যাহ্ন তন্মুখাম্বত্ব গাবশ্বক্রহরিধনিম।"- শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত, গোবিন্দদাসের কড়চা প্রভৃতি সুপ্রচারিত ও প্রামাণ্য গ্রন্থাদিতে ভাব বিশেষে পশুপক্ষী ইতব প্রাণীর আকৃষ্ট হওয়ার ভূরি ভূরি উদাহরণ থাকিলেও (আলোচনার অভাবে) অধুনা তাহা অলৌকিক বলিয়া গণ্য। যা হউক, যে কাহিনী সুপ্রচারিত, অলৌকিক হইলেও তাহা পরিত্যাগ না কবিয়া উল্লেখ কবিয়া যাওযই আমাদেব পক্ষে সঙ্গত,বিশ্বাস করা না কবা অভিরুচি সাপেক্ষ। এস্থলে প্রকাশ করা কর্তব্য যে, সন্ন্যাসের পরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পূৰ্ব্বদেশাগমন সংবাদ "উদায়বলী” ব্যতীত অপর গ্রন্থে পাওয়া যায় নাই। কিন্তু ঠিক এই সময কেবল শ্রীহট্টে মহে, ঠিক এমনই ভাবে শ্ৰীমহাগ্রন্থ যশোড়ায় গিয়৷ স্বত্তপ্রবর জগদীশ পণ্ডিত সহ সাক্ষাৎ কবিয ছিলেন, সে সংবাদও "জগদীশ চরিত্র বিজয়" নামক প্রাচীন বৈষ্ণব গ্রন্থ ব্যতীত অন্যান্য গ্রন্থে নাই। এস্থ্যতীত এই সমযেই কামরূপেও না কি শ্ৰীমহাপ্ৰভু পদার্পণ করিয়াছিলেন। হাজো নামক এক স্থানে এখনও “চৈতন্য গোফা” (গুহা) প্রদর্শিত হইয়া থাকে। অতএব এই সময় তিনি একাধিক স্থানে গমন করিয়াছিলেন। ৩ “তদবধি সেই স্থানে বামদয়াল খ্যাতি। সেইরূপ জনরব আছিয়ে সম্প্রতি।”—শ্রীচৈতন্যরত্নাবলী। í