পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৪ গঙ্গারাম গৃহে আসিয়া বহিৰ্ব্বাটিকায় এক টোল সংস্থাপন করেন, এই টোলে নানা স্থানের ছাত্রবর্গ আসিয়া অধ্যয়ন করিত। শ্রীহট্টের নবাব নজীবআলী খাঁ বাহাদুর শিরোমণিকে তদীয় গুণের পুরস্কার স্বরূপ বুরুঙ্গা, রেঙ্গা, ইন্দেশ্বর, ইটা ও আগনা হইতে ৩ জলুসে ১৫/২/০ ভূমি ব্ৰহ্মত্র দান করিয়াছিলেন। শ্রীহট্টের কালেক্টরীতে এই ভূমি দানের সনন্দ (নং ৮৩) আছে। ঐ ভূমি ১১৯৬ সালে তৎপুত্র গঙ্গাগোবিন্দের “তছরূপে" ছিল বলিয়া মন্তব্যে লিখিত আছে।” কি হিন্দু, কি মোসলমান, যাহারা স্বগুণে প্রসিদ্ধ ছিলেন, তাহারাই নবাব সরকার হইতে পুরস্কৃত হইতেন; গুণী না হইলে কেহই ভূদান প্রাপ্ত হইত না। শিরোমণির তিন পুত্র, জ্যেষ্ঠ গঙ্গাগোবিন্দ পরম পণ্ডিত ছিলেন, কনিষ্ঠ গৃহত্যাগী হন, মধ্যম সহিত পিতৃমাহাত্ম্য কীৰ্ত্তন করিয়াছেন, তাহার পিতার—“সৰ্ব্বস্তুল কলেবর, শ্যামঙ্গ সুমনোহর। শমধর সুনিন্দিত হাস্য” ছিল। রামরুদ্রের গুণ-গৌরব তিনি লিখিয়াছেন যে একদা স্বগ্রামস্থ শিবপ্রসাদ রায় নামক ব্যক্তির পিতৃশ্ৰাদ্ধোপলক্ষে পূৰ্ব্ববঙ্গের বহু পণ্ডিত-সমাগম ঘটে। সভাস্থলে শাস্ত্রালোচনা হইতেছে, এমন সময় রামরুদ্র তথায় উপস্থিত হইলেন ও কথা প্রসঙ্গে একটু হাস্য করিলেন। সভায় তাহার সম্মান দর্শনে কাশীশ্বর তর্কবাগীশ নামক জনৈক পণ্ডিত ঈর্ষান্বিত হইয়াছিলেন; এক্ষণে এই ছল পাইয়া তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া ব্যবহার ?” তর্কালঙ্কার যুক্ত করে দোষ স্বীকার করতঃ ক্ষমা চাহিলেন, কিন্তু সেই মুহুৰ্ত্তে সে ক্রুদ্ধ পণ্ডিতবর রক্ত বমন করিয়া মূচ্ছাগ্রস্থ হইলেন। ইহা দৈব, না রামরুদ্রের প্রভাবসঞ্জাত ঘটনা, অথবা কাকতালীয় ন্যায়, তাহা নিদ্ধারণ কঠিন। বাজু সোনাইত বাসী রামগোবিন্দ ভৌমিক ইহাদের কৌলিক শিষ্য। তত্ৰত কাশীনাথ ব্রহ্মচারীর ইচ্ছা যে রামগোবিন্দকে শিষ্য করেন। রামগোবিন্দ কিন্তু কৌলিক গুরুত্যাগে সম্মত ছিলেন না। ব্রহ্মচারী ইহাতে ক্রুদ্ধ হইয়া মন্ত্রৌষধি বলে তাঁহাকে পাগল করিয়া দেন। তর্কালঙ্কার এই সংবাদ পাইয়া শিষ্যালয়ে যাত্রা করেন। পথে দৈববশতঃ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে তাহার দেখা হইলে শ্লেষভাবে তিনি বলিলেন—“ভাল ব্রহ্মচারিন ভাল ব্রহ্মবিদ্যাই প্রকাশ করিযাছ।” এতৎ শ্রবণে ব্রহ্মচারী কোপে জুলিয়া উঠিলেন ও ভূমে পড়িয়া তৃণগুচ্ছ মুখে দিয়া তাহাকে অভিশাপ দিতে লাগিলেন। তর্কালঙ্কার সে দিকে দৃকপাত না করিয়া শিষ্যগৃহে উপনীত হইলেন ও বিবিধ প্রক্রিয়া এবং ঔষধ বলে শিষ্যকে আরোগ্য করিলেন। এদিকে সেই ব্রহ্মচারী প্রকৃতই পাগলবৎ তৃণ ভক্ষণ করিতে লাগিলেন। কাশীনাথের আত্মীয় স্বজন এতদ্বষ্টে ভীত হইয়া তর্কালঙ্কারের শরণাপন্ন হইলে, ইহাকেও তিনি বিবিধ প্রক্রিয়াতে সুস্থ করিলেন জীব হিংসন মহাপাপ, ইহাতে অৰ্জ্জিত জ্ঞান আচ্ছাদিত হইয়া পড়ে এবং শিক্ষিত বিদ্যার হানি হয় ও নিজেরই মন্দ হইযা থাকে; ব্রহ্মচারী এই উপদেশ দিয়া তিনি বিদায় দিলেন। ১৫, “তছরূপ” অর্থে আত্মসাৎ বা দখল। সুতবাং উত্তরাধিকাব সূত্রে পুৰ্ব্ববৰ্ত্তীয় ভূমি যিনি পাইতেন, “তছরূপকার” স্থলে র্তাহার নাম সনদের মন্তব্যে লিখিত হইত।