পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত মাঘ মাসে বিবাহের দিন নির্দিষ্ট হয়। ব্যাপারের ৩ দিন পূৰ্ব্বে মণিপুরপতি সীতাসহ লোকজন সমভিব্যবহারে উপনীত হইলেন। ত্রিপুরেশ্বর বহু সৈন্য সহ আসিতে উদ্যত হন, কিন্তু সসৈন্যে আসিতে গবৰ্ণমেন্ট কত্ত্বক বারিত হওয়ায় তিনি স্বীয় নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে প্রেরণ করেন। বিবাহের দিন যথারীতি ব্রাহ্মণদি ভোজন সমাপন হইলে নানাবিধ আমোদ প্রমোদ সম্পন্ন হয়। রাত্রে বিবাহের প্রাক্কালে অগ্নিক্রীড়া প্রদর্শন, আলোকমালা প্রজ্জ্বলন এবং সংকীৰ্ত্তন আরম্ভ হইল, ধূপ ধুনা জুলিয়া দিক আমোদিত হইল এবং শঙ্খ করতাল, মৃদঙ্গধবনির মধ্যে মণিপুরপতি সীতাসহ বিবাহমণ্ডপে উপস্থিত হইলেন। সিদ্ধবাবা তখন রামকে বুকে তুলিয়া দাড়াইলেন এবং অপর এক সন্ন্যাসী সীতাকে হস্ততলে তুলিয়া সপ্ত প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করিলেন। মণিপুরপতি কন্যাদানের দক্ষিণস্বরূপ সুবর্ণ-নিৰ্ম্মিত গুবাক ও কদলী কয়েকটি প্রদান করিলেন। বিবাহের পরদিন ঘোড়দৌড় পাতিখেলা প্রভৃতি আমোদ ও শাস্ত্রবিচার এবং ব্রাহ্মণের ভুরিভোজন সম্পন্ন হইল, তাহার পরদিন ত্রিপুররাজমন্ত্রী এবং মণিপুরপতি স্ব স্ব রাজ্যে গমন করিলেন। মহারাজের বস্ত্রাবাস হইতে লঙ্গাই নদী পর্যন্ত পূৰ্ব্বমুখে গমনপথের উভয় পাশ্বে কদলী বৃক্ষের সারি রোপিত হইয়াছিল। মহারাজ অশ্বারোহণে গমনকালে উভয় হাতে উলঙ্গ তরবারি ধরিয়া আশ্চর্য কৌশলে কদলী সারি দ্বিখণ্ডিত করিয়া গিয়াছিলেন; তাহার যাইবার বহু সময় পরে বাতাস বহিতে আরম্ভ হইলে একসঙ্গে সেই কদলী বৃক্ষ শ্রেণী ভূপাতিত হইয়া যায়। ইহার পরও উৎসব সপ্তাহ কাল স্থায়ী হয়, তাহার পরে সিদ্ধবাবা সাহায্যকারী ব্যক্তিবর্গকে আশীৰ্বাদ করিয়া তীর্থভ্রমণে বহির্গত হইতে চাহেন। সিদ্ধ বাবা রাধাগোবিন্দের আগ্রহে বাধা না দিয়া তাহাকে সঙ্গে লইয়াছিলেন। র্তাহারা প্রথমে চন্দ্রনাথ তীর্থে উপস্থিত হন; তৎপরে কোন কোন স্থানে গমন করিয়াছিলেন, তাহা জানা যায় নাই, রাধাগোবিন্দও তাহা প্রকাশ করেন নাই। এক বৎসর পর রাধাগোবিন্দ বাটীতে প্রত্যাগমন “তুম চলে আও” এই ধবনি হঠাৎ সকলে শুনিতে পাইয়া চমকিত হয়; এই ধবনি সিদ্ধ বাবার ডাকের মত শুনা গিয়াছিল। সিদ্ধ বাবার আকৃতি, অপরিমিত অর্থব্যয়ের প্রকার এবং মণিপুরপতি ও ত্রিপুরাজ্যের সহিত তদ্বিধ পরিচয় ইত্যাদি আলোচনায় অনেকের অনুমান যে ইনি কোনও রাজবংশীয় ব্যক্তি ছিলেন। (দত্তগ্রামবাসী শ্ৰীযুত মথুরামোহন দত্ত পুরকায়স্থ মহাশয় হইতে এই বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে।) রাধানাথ চৌধুরী করিমগঞ্জের অন্তর্গত আগিয়ারামের কাকুরা গ্রামের প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে দেবীপ্রসাদ এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, তাহার পুত্রের নাম গৌরীপ্রসাদ, রাধানাথ ইহারই পুত্র। ১৮৫৬ খৃঃ রাধানাথ জন্মগ্রহণ করেন। রাধানাথ গ্রাম্য পাঠাশালে কিঞ্চিৎ বাংলা ভাষা শিক্ষা করিয়া পঞ্চদশবর্ষ বয়ক্রম কালে, ইংরেজী শিক্ষার জন্য শিলচর হাইস্কুলে গমন করেন। তদীয় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গোপালকৃষ্ণ তথাকার একটি চা-বাগানে কেরাণীর কৰ্ম্ম করিতেন, তিনিই কোন প্রকারে রাধানাথের খরচ যোগাইতেন। দুর্ভাগ্য বশতঃ একটি সামান্য কারণে তিনি কৰ্ম্মচু্যত হওয়ায়, রাধানাথের শিলচরবাসের পথ রুদ্ধ হইয়া উঠে, রাধানাথ স্বয়ং বহু চেষ্টা করিয়া বিফল মনোরথ হইলেন। রাধানাথ নিরুপায হইয়া তখন শ্রীহট্টে উপস্থিত হইলেন ও কোনপ্রকার এখানে থাকিতে পারেন কি না, চেষ্টা করিতে লাগিলেন। র্তাহার চেষ্টা ফলবতী হইল। খ্যাতনামা উকিল স্বগীয় কৈলাসচন্দ্র ঘোষের আশ্রয়ে তিনি