পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৪০ পারিল না অৰ্জ্জুন বাধা দিয়া লোকটাকে রক্ষা করিল। তখন লোকেরা বুঝিতে পারিল যে অৰ্জ্জুনের হাস্য ক্ৰন্দনাদি বায়ুর বিকৃতিজনিত নহে। সেই দিন হইতে অৰ্জ্জুনের পাগল নাম ঘুচিল, অৰ্জ্জুন গৃহত্যাগপূৰ্ব্বক ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বনে কিঞ্চিৎ ডাল চাল সংগ্রহক্রমে একটা মৃৎপাত্রে একত্রে তাহা সিদ্ধ করিয়া তদারাই ক্ষুধানিবৃত্তি করিতেন। মৃৎপাত্রটা একটা গাছের ডালে লটকাইয়া রাখা হইত। অৰ্জ্জুনের বিবিধগুণ প্রকাশিত হইয়া পড়িল, যাহাকে যে কথা বলা হইত, তাহা সফল হইতে লাগিল। অতি দূরবত্তী স্থানে যাহা ঘটিত বা ঘটবে, অৰ্জ্জুন একস্থনে বসিয়া তাহা বলিয়া দিয়া সকলকে বিস্মিত করিতেন। তদবধি অৰ্জ্জুন “লেঙ্গটা বাবা” নামে খ্যাত ও সিদ্ধপুরুষ বলিয়া পরিজ্ঞাত হন। ইহার পর “লেঙ্গটা বাবাকে” চলিতাবাড়ীর আখড়ায় দেখা যায়, ঐ স্থানে তাহাকে বস্ত্র ব্যবহার করিতে দেখা গেলেও লেঙ্গটা বাবা নামটি যায় নাই। অমঙ্গল হইতেও মঙ্গলের উদ্ভব হইয়া থাকে। লেঙ্গটা বাবার বিবরণ তাহার প্রমাণ, ভগবৎকৃপা যে বিদ্যাকুলের অপেক্ষ রাখে না, লেঙ্গটা বাবার কথা ইহারও উদাহরণ। শরচ্চন্দ্র তপস্বী শরচ্চন্দ্র বৈদ্য সন্তান, তাহার পিতা নাম সোণাচাদ দত্ত। মাতা সিদ্ধেশ্বরী। সতরশতী পরগণার বাউরভাগ গ্রামে ১২৪৬ বাংলার কাৰ্ত্তিক মাসে পুরকায়স্থ বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যাবধি শরচ্চন্দ্রের সৰ্ব্ববিষয়ে ঔদাসীন্য লক্ষিত হইত, ইহাই পরে প্রবল বৈরাগ্যে পরিণত হইয়াছিল। শরচ্চন্দ্র কাশীধামে গমন করিয়া “চরক সংহিতা’ অধ্যয়ন করিয়াছিলেন; তাহার পর তথায় পাঁচবৎসর কাল বেদান্ত অধ্যয়নের পর তিনি ভক্তিশস্ত্র অধ্যয়নের জন্য বৃন্দাবনে গমন করেন। বৃন্দাবনে তিনি গোবিন্দদেবেব “ফৌজদার” নিযুক্ত হইয়া বহুদিন গোবিন্দের চাকুরি করেন। ইহাতে তাহার যে অর্থপ্রাপ্তি ঘটে, তদ্বারা তিনি “গোবিন্দঘাট” ও “শরৎকুঞ্জ” প্রতিষ্ঠাপূৰ্ব্বক স্বগীয় গোবিন্দের সেবার বন্দোবস্ত করিয়া যান। শরচ্চন্দ্র চিরকুমার, পরমজ্ঞানী ও পবিত্ৰচরিত্র ব্যক্তি ছিলেন, এরূপ চরিত্রবান ব্যক্তি সহসা দেখা যায় না। র্তাহার বুদ্ধির তীক্ষতা ও শাস্তুজ্ঞান অসাধারণ ছিল, বৃন্দাবনে অবস্থানকালে বহুকাল তিনি যোগ্যাভ্যাস করিয়াছিলেন, এবং তাহাতেই বৃন্দাবনে “তপস্বী” নামে খ্যাত হন। বৃন্দাবন হইতে “শ্রীচৈতন্য মত বোধিনী” নামী যে মাসিক পত্রিকা প্রচারিত হয়, ইনি তাহার কর্ণধারস্বরূপ ছিলেন। ১২৮৫ কি ৮৬ বাংলায় তিনি ভেখ আশ্রয় করিয়া গুরুচরণ দাস নামে খ্যাত হন, এবং বৃন্দাবনের “কুসুম সরোবরে” ভজনানন্দে ক্ষেপণ করেন, সেই স্থানেই ১৩০৬ বাংলার কাৰ্ত্তিক মাসে তিনি নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন। তাহার মৃত্যুর পর বৃন্দাবনের অনেক মহাত্মা ব্যক্তি তাহার অভাবে দুঃখিত হন। বৃন্দ্রবনের “শ্রীগৌড়েশ্বর বৈষ্ণব” পত্রে “ইহার মৃত্যুতে একজন বিশিষ্ট গুণীলোকের অভাব, গুণজ্ঞ মাত্রেরই অনুভূত হইল” বলিয়া খেদসূচক বাক্য প্রকাশিত হয়। শান্তারাম অধিকারী দাস জাতীয় পানিয়সী ও মহিষাসী ভ্রাতৃদ্বয়ের নামে পানিশালি পরগণার নাম হয়। এক বিপ্ৰপুত্র হরবৎনগরের গদিতে ভেখগ্রহণে শুকদেব নাম ধারণ পূৰ্ব্বক এই পানিশালিতে আগমন করেন; ইহার