পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৫৬ তলায় বসিয়া শঙ্খ বাদন করিতেন, তৎশ্রবণে শিষ্যবৰ্গ আসিয়া যথাশক্তি র্তাহার পূজা করিয়া যাইতেন। একবার তিনি শিষ্যবৰ্গকে বলিলেন, যে তিনি আর এদেশে থাকিবেন না পশ্চিমে চলিয়া যাইবেন; শিষ্যগণ তৎশ্রবণে বিলাপ করিতে লাগিল। তিনি তখন তাহাদিগকে আশ্বস্ত করিয়া সম্মুখবর্তী একটা বটবৃক্ষ দেখাইয়া বলিলেন যে সেই বৃক্ষে তাহার অধিষ্ঠান হইবে—র্তাহাদের চিন্তা করিবার কারণ নাই। কথিত আছে যে এই কথা বলিবার পর তাহাকে দেখিতে পাওয়া গেল না, তিনি অদৃশ্য হইয়া পড়িলেন। তদবধি সেই বৃক্ষ সকলের নিকট পূজিত হইতে লাগিল। অনেক পরে একদা এক ব্যক্তি সেই বৃক্ষে একটা অশ্ব বাধিয়া খাইতে দিয়াছিলেন। দড়ির টানে গাছের ছাল উঠিয়া গিয়াছিল এবং কথিত আছে যে তাহা হইতে রক্তের ন্যায় নির্যাস বাহির হইয়াছিল। কালক্রমে বৃক্ষটি ভাঙ্গিয়া যায় এবং তাহার মূলের মৃত্তিকা হইতে একটি কদম্ববৃক্ষ জাত হয়, এই বৃক্ষটিও বটবৃক্ষের ন্যায় লোকের মান্য হইয়াছে ও হরিঠাকুরের গাছ বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। হরিশরণ সেন মজুমদার তুঙ্গেশ্বরের মজুমদার বংশে ১৬৭৯ শকাব্দের ১৭ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে মহাত্মা হরিশরণ সেন জন্মগ্রহণ করেন। ভূমিষ্ঠের পরে তাহাকে মূচ্ছিত দেখা গেল—জীবনের যেন কোন চিহ্নই নেই, তখন পিতা রামেশ্বব সুতিকা গৃহে উপস্থিত হইলেন, কিছুকাল মধ্যে তাহার ক্রোড়ে শিশু চেতনালাভে ক্ৰন্দন করিয়া উঠিল। এই শিশু কালক্রমে এক অতি বিখ্যাত ব্যক্তি হইয়া উঠেন। হরিশরণ সেন দেশবাসী সকলের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন; তাহার গুণগ্রামে দেশের তাবৎ লোকই র্তাহার অনুগত ছিল। তিনি যোগশাস্ত্রের আলোচনায় পারদর্শিতা লাভ করেন ও যোগসিদ্ধ পুরুষরূপে পরিগণিত হন। তাহার ধৈর্য্য ও গাম্ভীর্য, ত্যাগ ও বিরাগ, সদাচার ও স্বধৰ্ম্মনিষ্ঠা, সকলই আদর্শ স্থানীয় ছিল। সুখ বা দুঃখ, সম্মিলন বা বিয়োগ, কিছুতেই তাহাকে অতিভূত করিতে পারিত না। মৃত্যুকে দেহ পরিবর্তন বই তিনি কিছুই মনে করিতেন না। অনেকেই গ্রন্থপাঠে তাহা জানিলেও উপলব্ধি করিতে পারে না, তাহার তদ্রুপ ছিল না। র্তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র শম্ভুচন্দ্র মৃত্যুর করালগ্রাসে পড়িয়া যখন এ জগতের সহ শেষ বিদায় লইতেছিলেন, ইষ্টধ্যান-নিরত হরিশরণ, পুত্রের মায়ায় ধ্যানভঙ্গ করিয়া শেষ দেখাটা পর্যন্ত করেন নাই, একথা আমরা মায়িক লোকে শুনিলে আশ্চৰ্য্য হই। এই সময় এক উদাসীন অতিথি তাহার গৃহে উপস্থিত হইলে, বরং তিনি অতিথি সৎকারেই রত হইয়াছিলেন। কিন্তু শোকের কোলে ঢলিয়া পড়েন নাই। দেবদ্বিজে তিনি পরম ভক্তিপরায়ণ ছিলেন। নম্রতাই মহদ্বংশের ভূষণ ও লক্ষণ; কোন ব্রাহ্মণ অল্পজ্ঞা সহকারে “দাস” সম্বোধন কবিলে, কেহ সে কথা কিঞ্চিৎ দুঃখের সহিত তাহাকে জানান; তৎশ্রবণে তিনি বলিয়াছিলেন, “হরিশরণ দাস, ব্রাহ্মণের দাস; বাজারে ঢোল পিটিয়া একথা সকলে ঘোষণা কর।” একদা পুটিজুরীবাসী জনৈক ব্রাহ্মণ চম্পক বৃক্ষারোহণে পুস্পচয়ন করিতে ছিলেন, সুন্দর সুপুষ্ট ফুল। ব্রাহ্মণের মনে হইল, এই ফুলগুলি পরম সাধক “মহাশয়কে”—হরিশরণ মহাশয় উপনামে খ্যাত ছিলেন,—দিলেই উপযুক্ত হয়। কিন্তু তিনি ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ-চিত ফুল ব্রাহ্মণেতরকে কিরূপে