পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত দিবেন ? এইভাব মনে হইলে তিনি, মহাশয়কে ফুল দিবেন না বলিয়াই মনে করিলেন। দৈবাৎ সেই সময় তিনি ভূপতিত হইলেন। ব্রাহ্মণের জ্ঞানচক্ষু তখন ফুটিল, বুঝিলেন যে তাহার এই ভূপতন মহতের অবজ্ঞার প্রত্যক্ষ ফল। ইহা মনে করিয়াই ব্রাহ্মণ ফুল লইয়া মহাশয়কে দিতে চলিলেন। ব্রাহ্মণ ফুল সহ সেন মহাশয়ের সকাশে বিরস বদনে উপস্থিত হওয়া মাত্রই তিনি বলিলেন “ঠাকুর । নীচ জাতির ব্যবহারের জন্য,—আপনি ব্রাহ্মণ, কেন ফুল দিতেছেন?” ভূত্যকে বলিলেন “এই ব্রাহ্মণকে সত্বর নববস্ত্র প্রদান কর, বৃক্ষ হইতে পড়িয়া ব্রাহ্মণের কাপড় ছিড়িয়া গিয়াছে।” ব্রাহ্মণ যে বৃক্ষ হইতে পতিত হইয়াছিলেন, তাহা কেহ দেখে নাই এবং তাহার পরিহিত বস্ত্রও যে ছিন্ন হইয়াছে, ইহাও অজ্ঞাত ছিল; কিন্তু পরে দেখা গেল যে মহাশয়ের কথাই সত্য। পরম সাধক সেন মহাশয় ব্রাহ্মণের মনের কথা জানিতে পারিয়াছেন দেখিয়া ব্রাহ্মণ যেমন লজ্জিত হইলেন, তেমনি চমকিত হইয়া গেলেন। একদা এক ধনী তাহাকে অবজ্ঞাপূৰ্ব্বক তাহার ধানক্ষেত্রে মৰ্দ্দন করিয়া স্বগীয় পূজার ভাসান লইয়া যাইতেছিল, সেন মহাশয় তৎশ্রবণে কিছুই প্রতীকার করিলেন না। এদিকে হঠাৎ অগ্নিসংযোগে সেই ধনীর গৃহাদি সমুদয় সম্পত্তি সহ ভস্মসাৎ হইল। মহৎ ব্যক্তির লঙঘনে এতাদৃশ প্রতিফল দৈব কত্ত্বকই প্রদত্ত হইয়া থাকে। প্রসিদ্ধ রাজা রাজবল্লভের উত্তরাধিকারী অংশীদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়া বিবাদ উপস্থিত হইলে, যখন অনেকেই ইহা মীমাংসায় অসমর্থ হন, তখন তাহাকে উভয় পক্ষই হরিশরণ সেনের মধ্যস্থতায় আপোষ হইয়াছিল এবং পারিতোষিকস্বরূপ এক খানা ঢাল পূর্ণ টাকা প্রদান করা হয়; কিন্তু তিনি শিষ্টাচারের সহিত তাহা গ্রহণ করেন নাই। হরিশরণ সেন মজুমদার ধৰ্ম্মাত্মা ও মহাত্মা ছিলেন, এই জন্যই সাধারণ্যে র্তাহার “মহাশয়” উপনাম হয়। “মহাশয়” বলিলে আজয্য লোকে হরিশরণ সেনকে বুঝিয়া থাকে। “মহাশয়ের বাড়ী” বলিলে তরফের তুঙ্গেশ্বরের মজুমদার বাড়ীই বুঝে। কেবল তাহাই নহে, “মহাশয়” শব্দের তাদৃশ ব্যবহার তুঙ্গেশ্বরের মজুমদার মহাশয়ের প্রভাবের কম নিদর্শন নহে। হরিচরণ সেন মজুমদার মহাশয়ের প্রভাবের কম নিদর্শন নহে। হরিচরণ সেন মজুমদার ৮৬ বৎসর বয়ঃক্রমে ১৭৬৫ শকে সজ্ঞানে মৃত্যুমুখে পতিত হন। খুরসেদপুর নামক গ্রামে হারুর জন্ম; ইহার সম্বন্ধে শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী আমাদিগকে যাহা লিখিয়া পাঠাইয়াছেন, তাহাই এস্থলে পাঠবর্গকে উপহার দিয়া বিদায় লইব । “বেগমপুরের পশ্চিমে নাড়িয়া নদীর পশ্চিম পারে, বাণাই হাওরের ঠিক পূৰ্ব্বতটে হিজল গাছের একটি বাগান বা সুন্দর কুঞ্জ আছে, ইহাই প্রসিদ্ধ পাঁচ পীরের মোকাম। একসময়ে পাঁচজন ফকির লোকহিতার্থে এই মোকাম স্থাপন করেন। বৃক্ষগুলি তাহাদেরই হস্তরোপিত। তাহারা দরবেশ ছিলেন, কে হিন্দু, কে মোসলমান জানিবার উপায় নাই। নদীয়া জেলার পাগলা কানাই ও পাগলা শাহা প্রসিদ্ধ দরবেশ ছিলেন, পানাউল্লা, হারু প্রভৃতি তাহাদের অসংখ্য শিষ্য ছিল। ইহাদিগকে যাহারা দেখিয়াছেন, তাহারা দরবেশ কি পদার্থ তাহা বুঝিবেন।” “হারু স্বগীয় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাকরান ভোগী বেহারা ছিল, শেষ বয়সে দরবেশ হইয়াছিল। পাঁচ হাত লম্বা পুরুষ মাথায় দীর্ঘ জটা। হরিনাম শুনিবার অবসর পাইলে হারুর আহার নিদ্রা থাকিত