পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫৪ তৎকালে মোক্তারপুর পরগণায় চান্দ খা নামক এক প্রতাপান্বিত ভূম্যধিকারী ছিলেন, সাধারণতঃ প্রজাবৰ্গ তাহাকে নবাব ও তদীয় পত্নীকে বেগম নামে অভিহিত করিত। এই চান্দ খা অনুচর বর্গ সহ এক গর্ভবতী অশ্বিনী আরোহণে ভ্রমণে গমন করিয়া সেই নিৰ্জ্জন কাননে ধূম দর্শনে কৌতুহলাক্রান্ত হইলেন ও তথায় উপস্থিত হইয়া তেজঃপুঞ্জ কলেবর ব্রাহ্মণ দম্পতিকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। প্রজ্জ্বলিত অনলকুণ্ডপার্শ্বে প্রোথিত ত্রিশূল সন্নিকটে উপবিষ্ট জপনিবিষ্ট সদাশিবকে মোসলমানগণ “দরবেশ” বলিয়াই মনে করিলেন। একজন অনুচর কৌতুকবশে তাঁহাকে জিজ্ঞাসিল যে, সেই গর্ভবতী অশ্বিনী-পুং কি স্ত্রী শাবক প্রসব করিবে ? “অশ্ব হইবে” বলিযা সদাশিব সহাস্যে উত্তর দিলেন। সদাশিবের প্রতি চান্দ খাঁর শ্রদ্ধা অথবা দয়ার উদ্রেক হইয়াছিল, তিনি দুইজন অনুচরকে এই নিরাশ্রয় বনাশ্রয়ীর প্রহরায় নিযুক্ত রাখিয়া চলিয়া গেলেন। অনন্তর চান্দ খা বনাশ্রয়ী ব্রাহ্মণ দম্পতির জন্য প্রত্যহ দুগ্ধ ও কদলী এবং আতপ তণ্ডুলাদি প্রেরণ করিতে লাগিলেন এবং প্রত্যহ এদিকে কয়েকদিনের মধ্যে দৈবক্রমে সেই অশ্বিনী এক অশ্বশাবকই প্রসব করিল। সদাশিবেব বাকো সফল হইযা গেল; ইহাতে লোকে তাহাকে বাক্যসিদ্ধ বলিয়া বোধ কবিতে লাগিল । চান্দ খার স্ত্রীব কয়েকটি কন্যা জাত হইয়াছিল, তিনি পুত্রমুখ দর্শনের কাঙ্গাল ছিলেন। তিনি পতি-মুখে সাধুর সংবাদ শ্রবণে সাধুদর্শনের জন্য অত্যন্ত উৎসুক হইলেন ও স্বামীকে অনুনয় করিতে লাগিলেন। পত্নীর অনুনয়ে চান্দ খা স্বীকৃত হইলে পরদিন বহুজন পরিবৃত হইযা সস্ত্রীক চান্দ সাধু-সকাশে উপস্থিত হইলেন। চান্দ খা-পত্নী তখন গর্ভবতী । পুত্র কাঙ্গালিনী সকাতবে সদাশিবকে স্বীয় অভিলাষ জানাইলেন। “মা, এ গর্ভে কি জমিবে কেমন বলিব। তবে আশীৰ্ব্বাদ করি, পুত্রমুখ দর্শন কর?” সাধুব এই আশীৰ্ব্বাক্যে নবাব-পত্নী হৃষ্টচিত্তে গুহে গেলেন । ইতিমধ্যে বনাশ্রয়ী ব্রাহ্মণপত্নী এক পুত্র সন্তান প্রসব কবিলেন। চান্দ খা তখন নল-জঙ্গল কাটাইয়া পরিষ্কৃত ক্রমে গুহাদি নিৰ্ম্মাণ কবিয়া দিলেন। ব্রাহ্মণ গৃহবাসী হইলেন। সদাশিবের এই পুত্রের নাম বাসুদেব । চান্দ খা-পত্নীও কালক্রমে একটি পুত্র জাত হইল। সদাশিবের প্রতি সবারই ভক্তি প্রবদ্ধিত হইয়া উঠিল। সূতিকা-কালাবসানেই বেগম ববলব্ধ সেই নবজাত শিশুসহ বনাশ্রমে উপস্থিত, বনাশ্রম আজ আনন্দে কোলাহলে টলমলাযমান। বেগম সাহেব সদাশিবকে পুত্র দেখাইয়া আশীৰ্ব্বাদ লইলেন ও তাহার পদপ্রান্তে একখানা সনন্দ রক্ষা করিয়া বিনীতভাবে বলিলেন, “বাবা, মাকে লইয়া এইখানেই বাস করিবেন। আমবা মধ্যে মধ্যে আসিয়া চরণ দর্শনে কৃতাৰ্থ হইব। এজন্য যাহা করিলাম এ সনন্দে তাহা লিখা আছে।” ব্রহ্মণ স্বীকৃত হইলেন। নবাব ও বেগমের যুগানাম সাক্ষরিত সেই সনন্দের নিৰ্দ্দেশানুসারে, উত্তরে ধোপাখালী, পূৰ্ব্বে পবাক ও কাগজপুরের খাল, দক্ষিণে সাদিপুরের খাল, পশ্চিমে নাড়িকানদী, এই চতুঃসীমান্তর্গত বগৈকক্রোশ পরিমিত গোলাকৃতি ভূখণ্ডের সহিত তিনি “চৌধুরী” আখ্যা পাহলেন ।