পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৮
সংকলন

আপন আপন সময় অনুসারে চলে গেছে। তবে তো সেই সমস্ত জানা লোকেরা আর কেউ কারো ঠিকানা খুঁজে পাবে না। জগতের কোথাও তাদের আর নির্দিষ্ট মিলনের জায়গা রইল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি এমন সময়ে বাড়ির কর্তা বেরিয়ে এলেন; জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে হে।” আমি নমস্কার করে বললুম, “আজ্ঞে, আমি কেউ না, আমি বিদেশী।”— কেমন ক’রে প্রমাণ করব, এ বাড়ি আমার এবং আমাদের ছিল। একবার ইচ্ছে হ’ল, অন্তঃপুরের সেই বাগানটা দেখে আসি; আমার সেই গাছগুলো কত বড়ো হয়েছে। আর সেই ছাতের উপরকার দক্ষিণমুখো কুঠরি, আর সেই ঘর এবং সেই ঘর এবং সেই আর-একটা ঘর। আর সেই-যে ঘরের সম্মুখে বারাণ্ডার উপর ভাঙা টবে গোটাকতক জীর্ণ গাছ ছিল— সেগুলো এত অকিঞ্চিৎকর যে হয়তো ঠিক তেমনি রয়ে গেছে, তাদের সরিয়ে ফেলতে কারো মনে পড়ে নি।

 আর বেশিক্ষণ কল্পনা করবার সময় পেলাম না। লণ্ডনের সুরঙ্গপথে যে পাতাল-বাষ্পযান চলে, তাই অবলম্বন ক’রে বাসায় ফেরবার চেষ্টা করা গেল। কিন্তু, পরিণামে দেখতে পেলুম, পৃথিবীতে সকল চেষ্টা সফল হয় না। আমরা দুই ভাই তো গাড়িতে চ’ড়ে বেশ নিশ্চিন্ত বসে আছি; এমন সময় গাড়ি যখন হ্যামার্‌স্মিথ নামক দূরবর্তী স্টেশনে গিয়ে থামল তখন আমাদের বিশ্বস্তচিত্তে ঈষৎ সংশয়ের সঞ্চার হ’ল। একজনকে জিজ্ঞাসা করাতে সে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলে, আমাদের গম্যস্থান যেদিকে এ-গাড়ির গম্যস্থান সেদিকে নয়। পুনর্বার তিন চার স্টেশন ফিরে গিয়ে গাড়ি বদল করা আবশ্যক। তাই করা গেল। অবশেষে গম্য স্টেশনে নেমে রাস্তায় বেরিয়ে আমাদের বাসা খুঁজে পাই নে। বিস্তর গবেষণার পর বেলা সাড়ে তিনটের সময় বাড়ি ফিরে ঠাণ্ডা টিফিন পাওয়া গেল। এইটুকু আত্মজ্ঞান জন্মেছে যে, আমরা দুটি ভাই