পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নববর্ষ
৫৯

 অদ্যকার নববর্ষে আমরা ভারতবর্ষের চিরপুরাতন হইতেই আমাদের নবীনতা গ্রহণ করিব— সায়াহ্নে যখন বিশ্রামের ঘণ্টা বাজিবে তখনও ঝরিয়া পড়িবে না— তখন সেই অম্লানগৌরব মাল্যখানি আশীর্বাদের সহিত আমাদের পুত্রের ললাটে বাঁধিয়া দিয়া তাহাকে নির্ভয়চিত্তে সবলহৃদয়ে বিজয়ের পথে প্রেরণ করিব। জয় হইবে, ভারতবর্ষেরই জয় হইবে। যে-ভারত প্রাচীন, যাহা প্রচ্ছন্ন, যাহা বৃহৎ, উদার, যাহা নির্বাক, তাহারই জয় হইবে; আমরা— যাহারা অবিশ্বাস করিতেছি, মিথ্যা কহিতেছি, আস্ফালন করিতেছি, আমরা বর্ষে বর্ষে:

মিলি মিলি যাওব সাগরলহরী সমানা।

তাহাতে নিস্তব্ধ সনাতন ভারতের ক্ষতি হইবে না। ভস্মাচ্ছন্ন মৌনী ভারত চতুষ্পথে মৃগচর্ম পাতিয়া বসিয়া আছে— আমরা যখন আমাদের সমস্ত চটুলতা সমাধা করিয়া বিদায় লইব, তখনো সে শান্তচিত্তে আমাদের পৌত্রদের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া থাকিবে। সে-প্রতীক্ষা ব্যর্থ হইবে না, তাহারা এই সন্ন্যাসীর সম্মুখে করজোড়ে আসিয়া কহিবে— “পিতামহ, আমাদিগকে মন্ত্র দাও।”

 তিনি কহিবেন—“ওঁ ইতি ব্রহ্ম।”

 তিনি কহিবেন—“ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি।”

 তিনি কহিবেন—“আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান্ ন বিভেতি কদাচন।”

 ১৩০৫, ১৩০৯