পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
সোনার তরী

একদিন বহুপূর্বে, আছে ইতিহাস—
নিকষে সোনার রেখা সবে যেন দিল দেখা
আকাশে প্রথম সৃষ্টি পাইল প্রকাশ।
মিলি যত সুরাসুর কৌতূহলে-ভরপুর
এসেছিল পা টিপিয়া এই সিন্ধুতীরে—
অতলের পানে চাহি, নয়নে নিমেষ নাহি,
নীরবে দাঁড়ায়ে ছিল স্থির নতশিরে।
বহুকাল স্তব্ধ থাকি শুনেছিল মুদে আঁখি
এই মহাসমুদ্রের গীতি চিরন্তন।
তার পরে কৌতূহলে ঝাঁপায়ে অগাধ জলে
করেছিল এ অনস্ত রহস্য মন্থন।
বহুকাল দুঃখ সেবি নিরখিল, লক্ষ্মীদেবী
উদিলা জগৎ-মাঝে অতুল সুন্দর।
সেই সমুদ্রের তীরে শীর্ণদেহে জীর্ণচীরে
খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর।

এতদিনে বুঝি তার ঘুচে গেছে আশ।
খুঁজে খুঁজে ফিরে তবু, বিশ্রাম না জানে কভু—
আশা গেছে, যায় নাই খোঁজার অভ্যাস।
বিরহী বিহঙ্গ ডাকে সারানিশি তরুশাখে,
যারে ডাকে তার দেখা পায় না অভাগা।
তবু ডাকে সারাদিন আশাহীন, শ্রান্তিহীন—
একমাত্র কাজ তার ডেকে ডেকে জাগা।
আর সব কাজ ভুলি আকাশে তরঙ্গ তুলি
সমুদ্র না জানি কারে চাহে অবিরত।
যত করে হায়-হায় কোনোকালে নাহি পায়,
তবু শূন্যে তোলে বাহু— ওই তার ব্রত।
কারে চাহি ব্যোমতলে গ্রহ তারা লয়ে চলে,
অনন্ত সাধনা করে বিশ্বচরাচর!