পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিত্রা
২৩৭

ঘরের কর্ত্রী রুক্ষমূর্তি বলে, ‘আর পারি নাকো—
রহিল তোমার এ ঘরদুয়ার, কেষ্টারে লয়ে থাকো।
না মানে শাসন, বসন বাসন অশন আসন যত
কোথায় কী গেল, শুধু টাকাগুলো যেতেছে জলের মতো।
গেলে সে বাজার সারা দিনে আর দেখা পাওয়া তার ভার।
করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি ভৃত্য মেলে না আর!’
শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে, আনি তার টিকি ধ’রে;
বলি তারে, ‘পাজি, বেরো তুই আজই, দূর করে দিমু তোরে।’
ধীরে চলে যায়, ভাবি গেল দায়; পরদিন উঠে দেখি
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি।
প্রসন্ন মুখ, নাহি কোনো দুখ, অতি অকাতরচিত্ত—
ছাড়ালে না ছাড়ে, কী করিব তারে, মোর পুরাতন ভৃত্য।

সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা করিয়া দালালগিরি।
করিলাম মন, শ্রীবৃন্দাবন বারেক আসিব ফিরি।
পরিবার তায় সাথে যেতে চায়, বুঝায়ে বলিনু তারে—
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য, নহিলে খরচ বাড়ে।
লয়ে রশারশি করি কষাকষি পোটলা-পুঁটলি বাঁধি
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে গৃহিণী কহিল কাঁদি,
‘পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে কষ্ট অনেক পাবে।’
আমি কহিলাম, ‘আরে রাম রাম, নিবারণ সাথে যাবে।’
রেলগাড়ি ধায়; হেরিলাম হায় নামিয়া বর্ধমানে,
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত তামাক সাজিয়া আনে।
স্পর্ধা তাহার হেনমতে আর কত-বা সহিব নিত্য?
যত তারে দুষি তবু হনু খুশি হেরি পুরাতন ভৃত্য।

নামিনু শ্রীধামে; দক্ষিণে বামে পিছনে সমুখে যত
লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্রাণটা করিল কণ্ঠাগত।