পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৬
ক্ষণিকা

গান তা শুনি কর্ণমূলে মর্মরিয়া কহে—
নহে, নহে, নহে।

কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান,
কোথায় পাবি মান?
নবীন ছাত্র ঝুঁকে আছে এক্‌জামিনের পড়ায়,
মনটা কিন্তু কোথা থেকে কোন্ দিকে যে গড়ায়,
অপাঠ্য সব পাঠ্য কেতাব সামনে আছে খোলা,
কর্তৃজনের ভয়ে কাব্য কুলুঙ্গিতে তোলা,
সেইখানেতে ছেঁড়াছড়া এলোমেলোর মেলা,
তারি মধ্যে ওরে চপল, করবি কি তুই খেলা?
গান তা শুনে মৌনমুখে রহে দ্বিধার ভরে—
যাব যাব করে।

কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান,
কোথায় পাবি ত্রাণ?
ভাণ্ডারেতে লক্ষ্মী বধূ যেথায় আছে কাজে,
ঘরে ধায় সে ছুটি পায় সে যখন মাঝে মাঝে,
বালিশ-তলে বইটি চাপা, টানিয়া লয় তারে,
পাতাগুলিন ছেঁড়াখোঁড়া শিশুর অত্যাচারে—
কাজল-আঁকা সিঁদুর মাখা চুলের গন্ধে ভরা
শয্যাপ্রাস্তে ছিন্নবেশে চাস কি যেতে ত্বরা?
বুকের ’পরে নিশ্বসিয়া স্তব্ধ রহে গান—
লোভে কম্পমান।

কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান,
কোথায় পাবি প্রাণ?
যেথায় সুখে তরুণযুগল পাগল হয়ে বেড়ায়,
আড়াল বুঝে আঁধার খুঁজে সবার আঁখি এড়ায়,