পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৮
খেয়া

তারি মাঝে দিঘির জলে যাবার বেলাটুকু
এইটুকু সময়
সেই গোধূলি এল এখন, সূর্য ডুবুডুবু—
ঘরে কি মন রয়?

কূলে-কূলে-পূর্ণ নিটোল গভীর ঘন কালো
শীতল জলরাশি,
নিবিড় হয়ে নেমেছে তায় তীরের তরু হতে
সকল ছায়া আসি।
দিনের শেষে শেষ আলোটি পড়েছে ওই পারে
জলের কিনারায়,
পথে চলতে বধূ যেমন নয়ন রাঙা ক’রে
বাপের ঘরে চায়।

শেওলা-পিছল পৈঠা বেয়ে নামি জলের তলে
একটি একটি ক’রে,
ডুবে যাবার সুখে আমার ঘটের মতো যেন
অঙ্গ উঠে ভ’রে।
ভেসে গেলেম আপন-মনে, ভেসে গেলেম পারে,
ফিরে এলেম ভেসে—
সাঁতার দিয়ে চলে গেলেম, চলে এলেম যেন
সকল হারা দেশে।

ওগো বোবা, ওগো কালো, স্তব্ধ সুগম্ভীর
গভীর ভয়ংকর,
তুমি নিবিড় নিশীথ-রাত্রি বন্দী হয়ে আছ—
মাটির পিঞ্জর।
পাশে তোমার ধুলার ধরা কাজের রঙ্গভূমি,
প্রাণের নিকেতন—