পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯০
পূরবী

আবার সাজাতে হবে আভরণে মানসপ্রতিমাগুলি?
কল্পনাপটে নেশার বরনে বুলাব রসের তুলি?
বিবাগি মনের ভাবনা ফাগুনপ্রাতে
উড়ে চলে যাবে উৎসুক বেদনাতে
কলগুঞ্জিত মৌমাছিদের সাথে, পাখায় পুষ্পধূলি।
আবার নিভৃতে হবে কি রচিতে মানসপ্রতিমাগুলি?

দেখ না কি হায়, বেলা চলে যায়, সারা হয়ে এল দিন!
বাজে পূরবীর ছন্দে রবির শেষ রাগিণীর বীন।
এতদিন হেথা ছিনু আমি পরবাসী,
হারিয়ে ফেলেছি সে দিনের সেই বাঁশি—
আজ সন্ধ্যায় প্রাণ ওঠে নিশ্বাসি গানহারা উদাসীন।
কেন অবেলায় ডেকেছ খেলায়— সারা হয়ে এল দিন।

এবার কি তবে শেষ খেলা হবে নিশীথ-অন্ধকারে?
মনে মনে বুঝি হবে খোঁজাখুঁজি অমাবস্যার পারে?
মালতীলতায় যাহারে দেখেছি প্রাতে
তারায় তারায় তারি লুকাচুরি রাতে?
সুর বেজেছিল যাহার পরশপাতে, নীরবে লভিব তারে?
দিনের দুরাশা স্বপনের ভাষা রচিবে অন্ধকারে?

যদি রাত হয় না করিব ভয়, চিনি যে তোমারে চিনি।
চোখে নাই দেখি, তবু ছলিবে কি হে গোপনরঙ্গিণী?
নিমেষে আঁচল ছুঁয়ে যায় যদি চ’লে
তবু সব কথা যাবে সে আমায় ব’লে—
তিমিরে তোমার পরশলহরী দোলে হে রসতরঙ্গিণী।
হে আমার প্রিয়, আবার ভুলিয়ো, চিনি যে তোমারে চিনি।

 ফাল্গুন ১৩৩০