আমার নাই। নন্দী সিংহকে সাজাইয়া আন। দেবী পিতৃগৃহে যাইবেন। তুমি ইঁহার সঙ্গে থাকিও, তুমি থাকিতে ইহার অনিষ্ট ঘটবে না, আমি এই ভরসায় পাঠাইতেছি।”
দেবী এই কথা বুঝিতে পারিলেন না। নন্দী মহাদেবের আদেশে সিংহকে সাজাইয়া লইয়া আসিল। কিন্তু তাহার মুখ ভ্রকুটীকুটিল, যেন ঘোর অনিচ্ছায় কোন মৃত্যুতুল্য কঠিন আজ্ঞা সে বহন করিতেছে। দেবী নন্দীর এই ভাব দেখিয়া প্রীত হইলেন না। তাহারও হৃদয় যেন কোন অনিশ্চিত আশঙ্কায় কম্পিত হইতে লাগিল।
এত ঘটা, এত উৎসব—কিন্তু প্রসূতি বিমনা। স্বাহা, কৃত্তিকা, রোহিণী প্রভৃতি সকল কন্যা আসিয়াছে, কিন্তু প্রিয়তমা সতী কোথায়! আজ তাঁহার গৃহে চাঁদের হাট বসিয়া গিয়াছে, কিন্তু সতীবিহনে তিনি বেদনাভরা। যাহার মুখের দিকে চাহেন, তাহাকে দেখিয়াই সতীকে মনে পড়ে, আর অঞ্চলাগ্রে নয়নজল মুছিয়া ফেলেন।
সতী অলক্তক-রঞ্জিত পদে নূপুর শিঞ্জিত করিয়া ছায়ার ন্যায় তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ঘুরিতেন। আজ সতী আসিবে না, কন্যা-বৎসলার হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতেছে।
এক একটি করিয়া দেবরথ ঘণ্টারবে আকাশ নিনাদিত করিয়া অবতীর্ণ হয়, আর প্রসূতি মরালীর ন্যায় গ্রীবা উন্নত করিয়া ভাবেন, এই বুঝি সতী আসিল। কিন্তু সতী আসিবে না, এই সত্য মনে অনুভব করিয়া দরদরপ্রবাহে অশ্রু বিসর্জ্জন করেন।