পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y (9 সবুজ পত্র আষাঢ়, ১৩২৩ ( ৬ ) হাস্যরস পদার্থটি যে কি, তা নিয়ে অনেক দার্শনিক অনেক মাথা ঘামিয়েছেন, বহু বৈজ্ঞানিক তার মূল অন্বেষণ করেছেন, সম্ভবতঃ এই কারণে যে,-মানুষে কেন যে কঁদে তা মানুষমাত্রেই জানে, কিন্তু আমরা কেন যে হাসি তা আমরা কেউ জানি নে । অন্যান্য রসের মত হাস্যরসের অন্তরেও একটা রহস্য আছে । সে রহস্য উদঘাটন করবার চেষ্টা করা আমাদের পক্ষে স্বাভাবিক হলেও, কাৰ্য্যতঃ প্ৰায়ই তা নিস্ফল হয়। তবে এই পৰ্যন্ত আমরা জানি যে, মানুষে হাসেএবং শুধু যে হাসে তাই নয়, পাঁচজনে মিলে হাসে । অপর পক্ষে, যে যথার্থ কঁদে সে এক কঁাদে,-পাঁচজনে মিলে কান্নাটা হচ্ছে শুধু ক্ৰন্দনের অভিনয়। এর থেকে এইটুকু বোঝা যায় যে, হাসি জিনিষটে একটি সামাজিক ব্যাপার। সুতরাং যে পাঁচজনকে হাসাতে পারে, সে পাঁচজনকে আনন্দ দেয়—এবং সেই সঙ্গে সমাজের উপকারও করে । Bergson নামক জগদ্বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক বলেন, সমাজ আত্মরক্ষার জন্য হাসির সৃষ্টি করেছে। তার মতে জড়ে ও জীবে যে শুধু প্ৰভেদ আছে তাই নয়, এ উভয় পরস্পরের পরম শত্রু। জড়াজগতের ধৰ্ম্মই হচ্ছে সে জীবকে গ্ৰাস করতে চায়, নিজের অন্তর্ভূত করে নিতে চায়,—এক কথায় জড়পদার্থে পরিণত করতে চায় ৷ দেহ ও মনের জড়তার বিরুদ্ধে মানবাত্মার তীব্ৰ প্ৰতিবাদের নামই হাসি । তিনি উদাহরণ স্বরূপে দেখিয়েছেন যে, একজনকে পা পিছলে পড়তে দেখলে আর পাঁচজনে যে হাসে, তার কারণ ও-ভাবে যে পড়ে, সে একটি জড়পদার্থের মত পড়ে। সে মুহুর্তে তার সমস্ত শরীর আড়ষ্ট হয়ে যায়, তখন দেখতে মনে ।