পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৫৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{৩য় বর্ষ, দশম সংখ্যা "go se este (G2Vy6 দেশের মশা মাছিগুলোও হয়ত প্রেমের গুরুগিরি করতে জানে । এমন সময় অনতিদূরের এক ধানের ক্ষেত থেকে ফুড়ৎ করে এক ঝাক পায়রা উড়ে আকাশের গায়ে একটি অৰ্দ্ধচন্দ্ৰ গড়লে । আবার পরক্ষণেই জোড়ে জোড়ে এদিক ওদিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলুম। এর পর যা দেখলুম, তাতে বড়ই অভিভূত হয়ে পড়লুম। দেখি একটি বালিকা অলক্ষ্যে এসে বড়ই কৌতুহলী হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যেমনি চেয়েছি, অমনি ছুটে দৌড়। বড় সুন্দরী সে বালিকা। যেন হীরামণিকের টুকরো। মুহূৰ্ত্তের মধ্যে আমার হৃদয়-মন যথাসর্বস্ব সেই নাবালিকাকে সঁপে দিলুম। বলা বাহুল্য আমি Love-য়ে পড়ে গেলুম। অবশ্য এর আগেও দু-একটি সহরে মেয়ের সঙ্গে ভালোবাসায় পড়েছিলুম। কিন্তু সে সব পূর্ব গ্ৰীতির স্মৃতি সেই মুহুর্তে হৃদয় থেকে মুছে গেল। আমার সমস্তৃ অন্তর সেই পল্লীবালার রূপেই ভরে রইল। সারা রাত সেই বনফুলকে চোখে ধরে রাখলুম। একটুও ঘুম হল না— শুধু স্বপ্ন। তার পর মনে হল যে ভোরে উঠে এদিক ওদিক পায়চারি করছি । দেখি আমার সেই কল্পনার ধন একটি শিউলী গাছের তলায়। থেকে থেকে ভোরবেলার দমকা বাতাস বচ্ছে। শিউলীফুল করছে। বালিকার মিশ্ৰমিশে কালো কেঁকুড়া কেঁকুড়া চুলগুলো উড়ে উড়ে চোখে মুখে এসে পড়ছে। বালিকা আঁচল ভরে ফুল কুঁড়োচ্ছে । কি চোখজুড়ানো কি মনভোলানো দৃশ্য! আমি ধীরে ধীরে গিয়ে বালিকার কাছে দাঁড়ালুম। পকেট থেকে একটি সোণার আংটি বার করে বালিকার হাতে দিতে গেলুম। বালিকা অমনি সলজ্জ ভাবে ঘাড় বেঁকিয়ে মুখ ফিরিয়ে দাড়ালে।