পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০৪ সবুজ পত্র জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৫ যে ঝড়ো-মেঘ দেখা দিয়েছিল, তা এক নিমেষে কেটে গেছে। মেঘ যে কেটে যাবে, তা আমাদের বােঝা উচিত ছিল, কেননা “মানুষ আমরা নহিত মেষ”। আমরা যে তা বুঝিনি তার কারণ আমরা কবির কথাকে গানের দরবারে আদর করি-প্রাণের কারবারে আমল দিই নে। সে যাই হােক এখন জানা যাচ্ছে যে, এ দেশের উপর জৰ্মাণ বাটপাড়ির কথাটা হচ্ছে একেবারে উদ্ভট। কিম্বদন্তির ভিতর যতটুকু ইতিহাস থাকে ওগুজবের ভিতর তার বেশী আর কিছু নেই। তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের এই নীল আকাশে ঐ লাল মেঘের ইন্দ্রজাল রচনা করবার কি দরকার ছিল। ঘরপােড়-গরু সিঁদুরেমেঘ দেখলে যে ভয় পায়-এ প্রবাদ কি ইংরেজিতে নেই ? তবে লাভের মধ্যে এই যে, এই ধাক্কায় আমাদের মনটা একটা বড় রকম ঝাঁকুনি খেয়েছে এবং আশা করি সেই সঙ্গে কতকটা সচেতনও হয়েছে। অতঃপর শুনছি এ যুদ্ধের হয় এসপার নয় ওপার ভারতবর্ষের বায়ুকোণে নয়—ফ্রান্সের ঈশানকোণেই হবে। এ ভবিষ্যদ্বাণী খুব সম্ভবতঃ খাটবে। ইউরােপের অনেক বড় বড় যুদ্ধ বিগ্রহের যাহয় একটা হেস্তনেস্ত ইতিপূৰ্ব্বে বহুবার ঐ কোণেই হয়ে গেছে। এযুদ্ধ এতটা অপু যে, পূৰ্ব্ব পূর্ব যুদ্ধের নজির, অনেকের মতে এক্ষেত্রে খাটবে না। বিশেষতঃ এই যখন পৃথিবীর শেষ যুদ্ধ। এযুদ্ধের আকার যে বিপুল, তা ত সকলেই জানে এবং অনেকে বলে এর উদ্দেশ্যও অতুল। এ লড়াই মাটির উপরে হলেও মাটির জন্য নয়। স্থূলদৃষ্টিতে এ ব্যাপার দেহের সঙ্গে দেহের সংঘর্ষ বলে বােধ হলেও, সুক্ষ্মদৃষ্টিতে ধরা পড়ে যে এ হচ্ছে আত্মার সঙ্গে আত্মার লড়াই।