পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so সবুজ পত্র . কাৰ্ত্তিক ও অগ্রহায়ণ, ১৩২৫ পরিস্ফুট। কিন্তু তাই বলে মুখের কথার সঙ্গে বইয়ের কথার পার্থক্য । জাতিগত নয়। সুন্দরী স্ত্রীলোক ও অ-সুন্দরী স্ত্রীলোকের মুখ একই উপাদানে গড়া, নাক কান চোখ মুখ দুজনেরই আছে এবং কম্পাস দিয়ে মেপে দেখলে দেখা যাবে যে, সে সকলের মাপ জোখও প্রায় সমান, অথচ র্যার চোখ আছে তিনিই জানেন যে, সুন্দরী ও অ-সুন্দরীর ভিতর একটি স্পষ্ট, শুধু স্পষ্ট নয়, একটি জাজ্জ্বল্যমান প্ৰভেদ আছে। একটিকে দেখে মানুষে চমৎকৃত হয়, আর একটিকে দেখে তা হয় না । আমাদের সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্ৰে বলে যে, যে লেখা পড়ে মানুষে চমৎকৃত হয়-সেই লেখাই কাব্য অর্থাৎ সাহিত্য । শ্ৰী কিসের উপর নির্ভর করে তার পরিচয় দেওয়া অসম্ভব-তবে এ কথা নিৰ্ভয়ে বলা যেতে পারে যে, মানুষের মুখশ্ৰী যেমন মুখের প্ৰতি অংশের পুর্ণবিকাশ, এবং সকল অংশের সঙ্গতি ও সুষমার উপর নির্ভর করে, কাব্যশ্ৰীও তেমনি ভাষার পূর্ণবিকাশ ও শব্দের সঙ্গতি ও সুষমার উপর নির্ভর করে। আলঙ্কারিকের বলেন যে, এতদন্তিরিক্ত লাবণ্য বলে আর একটি জিনিষ আছে, যা না থাকলে কাব্যের বাহ্য-শ্ৰী থাকতে পারে। কিন্তু তার চমৎকারিত্ব থাকে না। এ কথায় আমিও সায় দিই, যদিচ এই লাবণ্য বস্তুটি কি তা যিনি জানেন না, তঁাকে তা বুঝিয়ে দিতে পারা কঠিন। এ হচ্ছে সেই জাতীয় বস্তু যার অস্তিত্ব আমরা জানি। কিন্তু সে অস্তিত্বের রহস্য আমরা উদঘাটন করতে পারিনে। তবে- এ জিনিষের মূল যে কোথায় তা । আমরা অনুমান করতে পারি। যা জীবন্ত নয়, সে পদার্থের অর্থাৎ জড়পদার্থের দেহে লাবণ্য নেই, এই থেকে আন্দাজ করা যায়, রূপের ভিতর দিয়ে প্ৰাণের যে দিব্য আলো ফুটে ওঠে, তারই নাম