পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক আইন চাই না, রাষ্ট্রসঘ চাই না। যা-খুশি যখন খুশি যেমন-খুশি করাই যেহেতু বিধি। আমেরিকা যাকে চাইবে, প্রতিটি দেশের সরকার চালাবে সেই ব্যক্তি। সার্বভৌমত্ব এখন থেকে অতীতের মহাফেজখানার প্রত্নবস্তু কেননা গোটা পৃথিবীতে বুশায়ন হি কেবলম। জনমত বলে কিছু নেই; যেহেতু মানুষ নামক প্রাণী থাকলেও মনুষ্যত্ব অবান্তর।

 মার্কিন বাজেটে ঘাটতি উনিশ হাজার কোটি ডলার, মার্কিনীদের ব্যক্তিগত ও সংস্থাগত ঋণের পরিমাণ পৌনে দু-লক্ষ কোটি ডলার। তাই ওদের অঢেল তেল চাই নইলে শক্তিমদমত্ততার মূল স্নায়ুকেন্দ্র টলে যাবে। ওদের ডলার চাই কাড়িকাড়ি যাতে ইউরো ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলতে না পারে। ওরা বিশ্বকে সন্ত্রস্ত করে তুলছে। কেননা ওদের মনস্তত্ত্বের গভীরে রয়েছে বিপুল ভয়। তাই বিশ্বায়ন, থুড়ি বুশায়ন-এর নামে সব কিছু একাকার করে দিচ্ছে ওরা। এই কালবেলায় তবু প্রতিরোধেও নতুন প্রকরণ তৈরি হচ্ছে। দাঁত-খিচানো পেশি-ফোলানো ভয়ঙ্করকে ভয় দেখানো ওই প্রকরণের অঙ্গ। না-মানুষী জান্তব কুশ্রীতার বিরুদ্ধে, সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের বিশ্ব জুড়ে স্বপ্নময় সম্ভোগের জাল ছড়ানোর বিরুদ্ধে, ঘরে ঘরে মহল্লায় মহল্লায় সংস্থায় সংস্থায় বুশায়নের বিরুদ্ধে স্পর্ধিত তর্জনি তুলে দেখানো এবং সব ধরনের প্রতিবাদী মানুষের যুক্তফ্রণ্ট গড়ে তোলাই আজকের দায়।

 ইরাক যদি কালবেলার কৃষ্ণবিবরকে উন্মুক্ত করে থাকে, মানুষের পাশে মানুষ হয়ে দাঁড়ানোর জন্যে, মানুষের জমায়েতে মানুষ খুঁজে নেওয়ার জন্যে জরুরি প্রস্তুতি তো শুরু হল এখন। নতুন নতুন পথে নতুন নতুন পাথেয় খোঁজা চলুক অবিরাম। আর, প্রতিটি মুহূর্তে চলুক বুশায়ন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত লড়াই, নিরবচ্ছিন্ন ক্রোধ ও ঘৃণার অঙ্গীকার।

৪৯