কিন্তু সহজ-বুদ্ধিতে স্বভাবতই মনে হয় যে, ভাবতবর্ষ থেকে শিকড় উৎপাটন করে’ও আমরা বাঁচ্বনা এবং যে ইংরাজি শিক্ষা আমাদের চতুর্দ্দিকে নানা আকারে বর্ষিত ও প্রবাহিত হচ্চে তাও আমাদের শিরোধার্য্য করে’ নিতেই হবে। মধ্যে মধ্যে দুটো একটা বজ্রও পড়্তে পারে এবং কেবলি যে বৃষ্টি হবে তা নয়, কখন কখন শিলাবৃষ্টিরও সম্ভাবনা আছে, কিন্তু বিমুখ হয়ে যাব কোথায়? তা ছাড়া এটাও স্মরণ রাখা কর্ত্তব্য এই যে নূতন বর্ষার বারিধারা এতে আমাদেব সেই প্রাচীন ভূমির মধ্যেই নবজীবন সঞ্চার করচে।
অতএব ইংরাজি শিক্ষায় আমাদের কি হবে? আমরা ইংরাজ হব না, কিন্তু আমরা সবল হব উন্নত হব জীবন্ত হব। মোটের উপরে আমরা এই গৃহপ্রিয় শান্তিপ্রিয় জাতিই থাক্ব, তবে এখন যেমন “ঘর হৈতে আঙিনা বিদেশ” তেমনটা থাক্বে না। আমাদের বাহিরেও বিশ্ব আছে সে-বিষয়ে আমাদের চেতনা হবে। আপনার সঙ্গে পরের তুলনা করে’ নিজের যদি কোনো বিষয়ে অনভিজ্ঞ গ্রাম্যতা কিম্বা অতিমাত্র বাড়াবাড়ি থাকে তবে সেটা অদ্ভুত হাস্যকর অথবা দূষনীয় বলে’ ত্যাগ করতে পার্ব। আমাদের বহুকালের রুদ্ধ বাতায়নগুলো খুলে দিয়ে বাহিরের বাতাস এবং পূর্ব্বপশ্চিমের দিবালোক ঘরের মধ্যে আনয়ন কর্তে পার্ব। যে-সকল নির্জ্জীব সংস্কার আমাদের গৃহেব বায়ু দূষিত কর্চে কিম্বা গতিবিধির বাধারূপে পদে পদে স্থানবিরোধ করে’ পড়ে’ আছে, তাদের মধ্যে আমাদের চিন্তার বিদ্যুৎ-শিখা প্রবেশ করে’ কতকগুলিকে দগ্ধ এবং কতকগুলিকে পুনর্জ্জীবিত করে’ দেবে। আমরা প্রধানত সৈনিক, বণিক অথবা পথিক-জাতি না হ’তেও পারি কিন্তু আমরা সুশিক্ষিত পরিণতবুদ্ধি সহৃদয় উদারস্বভাব মানবহিতৈষী ধর্ম্মপরায়ণ গৃহস্থ হয়ে উঠ্তে পারি এবং বিস্তর অর্থসামর্থ্য না থাক্লেও সদা-সচেষ্ট জ্ঞান প্রেমের দ্বারা সাধারণ মানবের যথেষ্ট সাহায্য করতেও পারি।