পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
৭৫

ধার ধারিনা। তাই যদি সত্য হয় তবে কেন ভাই তুমি বিশ্বযুদ্ধ লোককে “মাই ডিয়ার” লেখ। আমি বুড়, তোমার ঠাকুরদাদা, আজ সাড়ে তিন মাস ধরিয়া কাশিয়া মরিতেছি তুমি একবার খোঁজ লইতে আস না। আর জগতের সমস্ত লোক তোমার এমনি প্রিয় হইয়া উঠিয়াছে যে তাহাদিগকে মাই ডিয়ার না লিখিয়া থাকিতে পার না। এও কি একটা দস্তুর মাত্র নয়! কোন্‌টা বা ইংরাজী দস্তুর কোন্‌টা বাংলা দস্তুর। কিন্তু সেই যদি দস্তুর মতই চলিতে হইল তবে বাঙালীর পক্ষে বাংলা দস্তুরই ভাল। তুমি বলিতে পার “বাঙালাই কি ইংরাজিই কি কোনো দস্তুর, কোনো আদবকায়দা মানিতে চাহি না। আমি হৃদয়ের অনুসরণ করিয়া চলিব।” তাই যদি তোমার মত হয় তুমি সুন্দরবনে গিয়া বাস কর, মনুষ্যসমাজে থাকা তোমার কর্ম্ম নয়। সকল মানুষেরই কতকগুলি কর্ত্তব্য আছে, সেই কর্ত্তব্য-শৃঙ্খলে সমাজ জড়িত। আমার কর্ত্তব্য আমি না করিলে তোমার কর্ত্তব্য তুমি ভালরূপে করিতে পার না। দাদামহাশয়ের কতকগুলি কর্ত্তব্য আছে, নাতির কতকগুলি কর্ত্তব্য আছে। তুমি যদি আমার বশ্যতা স্বীকার করিয়া আমার আদেশ পালন কর, তবেই তোমার প্রতি আমার যাহা কর্ত্তব্য তাহা আমি ভালরূপে সম্পন্ন করিতে পারি। আর, তুমি যদি বল আমার মনে ভক্তির উদয় হইতেছে না তখন আমি কেন দাদামহাশয়ের কথা শুনিব, তাহা হইলে যে কেবল তোমার কর্ত্তব্যই অসম্পূর্ণ রছিল তাহা নহে তাহা হইলে আমার কর্ত্তব্যেরও ব্যাঘাত হয়। তোমার দৃষ্টান্তে তোমার ছোট ভাইরাও আমার কথা মানিবে না, দাদামহাশয়ের কাজ আমার দ্বারা একেবারেই সম্পন্ন হইতে পারিবে না। এই কর্ত্তব্যপাশে বাঁধিয়া রাখিবর জন্য, পরম্পরের প্রতি পরম্পরের কর্ত্তব্য অবিশ্রাম স্মরণ করাইয়া দিবার জন্য, সমাজে অনেকগুলি দস্তুর প্রচলিত আছে। সৈন্যদের যেমন অসংখ্য নিয়মে বদ্ধ হইয়া থাকিতে হয় নহিলে তাহারা