পাতা:সমাজ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ বৰ্ত্তমানের প্রতি অরুচি ইহা প্রায়ই বর্তমানের দোষে হয় না, আমাদের নিজের অসম্পূর্ণত বশত হয়, আমাদের হৃদয়ের গঠনের দোষে হয়। বর্তমানই আমাদের বাসস্থান এবং কাৰ্য্যক্ষেত্র। কাৰ্য্যক্ষেত্রের প্রতি যাহাব অনুরাগ নাই সে ফাকি দিতে চায় ৭ যথার্থ কৃষক আপনার চাষের জমিটুকুকে প্রাণের মত ভালবাসে, সেই জমিতে সে শস্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রেম বপন করে ; আর যে কৃষক কাজ করিতে চায় ন কুঁকি দিতে চায়, নিজের জমিতে পা দিলে তাহার পায় যেন কাটা, ফুটিতে থাকে, সে কেবলই খুৎ খুৎ করিয়া বলে আমার জমির এ দোষ । সে দোষ, আমার জমিতে, কাকর, আমার জমিতে কঁাটাগাছ ইত্যাদি । নিজের ছাড়া আর সকলের জমি দেখিলেই তাহার চোখ জুড়াইয়া যায়। সময়ের পরিবর্তন হইয়াছে এবং হইয়াই থাকে। সেই পরিবর্তনের জন্ত আমাদিগকে প্রস্তুত হইতে হইবে। নহলে, আমাদের জীবনই নিস্ফল। নহিলে, মিউজিয়মে প্রাচীনকালের জীবেরা যেমন করিয়া স্থিতি করিতেছে আমাদিগকেও ঠিক তেমনি করিয়া পৃথিবীতে অবস্থান করিতে হইবে। পরিবর্তনের মধ্যে যেটুকু সার্থকতা আছে, যেটুকু গুণ আছে তাহা আমাদের খুজিয়া বাহির করিতে হইবে । কারণ সেইখান হইতে রসাকর্ষণ করিয়া আমাদিগকে বাড়িতে হইবে, আর কোনো গতি নাই। যদি আমরা সত্যই জলে পড়িয়া থাকি তবে সেখানে ডাঙ্গার মত চলিতে চেষ্টা করা বৃথা, সাতার দিতে হইবে। অতএব, তুমি যে বলিতেছ, আমরা আজ-কাল গুরুজনকে যথেষ্ট মান্ত করি না সেটা মানিয়া লওয়া যাক, তার পরে এই পরিবর্তনের ভিতরকার কথাটা একবার দেখিতে চেষ্টা করা যাকৃ। এ-কথাটা ঠিক নহে যে ভক্তিটা সময়ের প্রভাবে মানুষের হৃদয় হইতে একেবারে চলিয়া গেছে—তবে কি না, ভক্তিস্রোতের মুখ একদিক হইতে অন্য দিকে গেছে একথা সম্ভব হইতে পারে বটে। পূৰ্ব্বে আমাদের দেশে ব্যক্তিগত