পাতা:সমালোচনা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বস্তুগত ও ভাবগত কবিতা।
৬৩

ক্ষুদ্রতা আমাদের অসম্পূর্ণতা চোখে পড়ে, সংশয়ান্ধকারে আচ্ছন্ন প্রকাণ্ড রহস্যের মধ্যে নিজেকে রহস্য বলিয়া বোধ হয়– সে রহস্য ভেদ করিতে গিয়া হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসি। সমুদ্রে সাঁতার দিতে ইচ্ছা হয়, অথচ তাহা আমাদের সাধ্যের অতীত! অনেক উপকূলবাসী চিরজীবন এই উপকূলের কোলাহলে কাটাইয়াছেন, অথচ এই সমুদ্রতীরে আসেন নাই, সমুদ্রের বায়ু সেবন করেন নাই। তাঁহাদের হৃদয় কখন স্বাস্থ্য লাভ করে না। হৃদয়কে এই সমুদ্রতীরে আনয়ন করা, এই সমুদ্রের বক্ষে ভাসমান করা ভাবগত কবিতার কাজ। ভাবগত কবিতায় হৃদয়ের স্বাস্থ্য সম্পাদন করে। ইন্দ্রিয়জগৎ হইতে মনকে আর-এক জগতে লইয়া যায়। দৃশ্যমান জগতের সহিত সে জগতের সাদৃশ্য থাকুক্‌ বা না থাকুক্‌ সে জগৎ সত্য জগৎ, অলীক জগৎ নহে। ভাবুক লোক মাত্রেই অনুভব করিয়াছেন যে, আমরা মাঝে মাঝে এক প্রকার বিষণ্ন সুখের ভাব উপভোগ করি, তাহা কোমল বিষাদ, অপ্রখর সুখ। তাহা আর কিছু নয়, সীমা হইতে অসীমের প্রতি নেত্রপাত মাত্র। কোন্‌ কোন্‌ সময়ে আমাদের হৃদয়ে ঐ প্রকার ভাবের আবির্ভাব হয় তাহা আলোচনা করিয়া দেখিলেই উক্ত বাক্যের সত্যতা প্রমাণ হইবে। জ্যোৎস্নারাত্রে, দূর হইতে সঙ্গীতের সুর শুনিলে, সুখস্পর্শ বসন্তের বাতাস বহিলে, পুষ্পের ঘ্রাণে, আমাদের হৃদয় কেমন আকুল হইয়া উঠে–উদাস হইয়া যায়। কিন্তু জ্যোৎস্না সঙ্গীত বসন্তবায়ু সুগন্ধের ন্যায় সুখসেব্য পদার্থের উপভোগে আমাদের হৃদয় অমন আকুল হয় কি কারণে? কেন, সুমিষ্ট দ্রব্য আহার