পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমুদ্রের স্বাদ করে এখানে থাকিলেই বা এমন কি নিরাপদ আশ্রয় তার জুটিবে, যেখানে টাকার ভাবনা না ভাবিয়া নিশ্চিন্ত মনে রাত্রিটা ঘুমাইয়া কাটাইয়া দেওয়া চলিবে? ষ্টেসন-মাষ্টারের ঘরের সামনে ওই তিন হাত চওড়া শেডটার নীচে সরু বেঞ্চটাতে শুইয়াই সম্ভবতঃ রাতটা তার কাটাইয়া দিতে হইবে, এই জনশূন্য ফাক ষ্টেশনে । টাকা যে তার সঙ্গে আছে, এ খবরটা তো কারও জানিবার কথা নয়। সহরে এগার মাস চাকরী করিয়াই সে সে শ’খানেক টাকা জমাইয়া ফেলিয়াছে আর সবগুলি টাকা সঙ্গে নিয়াই ছেলেমেয়ে ও বৌকে সহরে নিয়া যাইতে আসিয়াছে, এরকম একটা ধারণা চোর ডাকাতের মনে আসিবে কেন ? তাছাড়া, ছুটি মোটে তার দুদিনের, একটা দিনতে কাটিয়াই গেল। কাল সকলকে সঙ্গে করিয়া আসিয়া বেলা তিনটার গাড়ী ধরা চাই, পরশু কাজে না গেলে চলিবে নাতার কত দুঃখে সংগ্ৰহ করা কত কষ্টের কাজ ! আজ রাত্ৰেই গিয়া শ্বশুরবাড়ীী হাজির হওয়া ভাল। সকালে উঠিয়াই রওনা হওয়ার আয়োজন আরম্ভ করিয়া দেওয়া যাইবে । মনের মধ্যে এতগুলি যুক্তি খাড়া করিয়া ঠাটিতে আরম্ভ করিলেও কেমন যেন ফাপর ফঁাপির লাগিতে লাগিল যাদবের । ষ্টেসনের কিছু তফাতেই কয়েকখানা খড়ে ঘর নিয়া ছোট একটি বস্তি, ইতিমধ্যেই নিঝুম হইয়া গিয়াছে। বস্তিটি পার হইয়া যাওয়ার পরেই চারিদিকে ফাক মাঠ, অন্ধকারে বেশীদূর দৃষ্টি চলে না, তবু যেন দেখা যায়, কারণ দিগন্তের সীমায় আকাশ নিজেকে দৃশ্য করিয়া রাখিয়াছে। দেহামনের একটা খাপছাড়া অস্বস্তিবোধ ক্ৰমেই জোরালো হইয়া উঠিতে থাকে এবং যাদবের আর বুঝিতে বাকী থাকে না যে ভয়ের উৎসটা শুধু তার কোমরে বাধা টাকাগুলি নয় ।