পাতা:সমুদ্রের স্বাদ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আততায়ী এক ঘণ্টার মধ্যে দিবাকর তার চোখে অস্ত্ৰ করিল। মহামায়া স্নান্নাঘরে দিবাকরের প্রিয় খাদ্য পায়েস করিতে বড় ব্যস্ত ছিল, কড়াই নামাইয়া উপরে গিয়া সে দেখিল, তার কাণ স্বামীর ভাল চোখটিও ব্যাণ্ডেজে ঢাকা পড়িয়াছে। নিজের চোখ দুটি আক্রমণোদ্যত বাঘিনীর চোখের মত করিয়া সে দিবাকরের দিকে চাহিয়া রহিল । দিবাকর নিৰ্বিকার সহজভাবে বলিল, “সময় মত বলেনি, কি হয় এখন কে জানে ৷” সুতরাং কৃত্তিবাস অন্ধ হইয়া গেল । তারপর একদিন সকালে নীচের ঘরের অন্ধকারে বসিয়া বসিয়া ঝমানোর বদলে উপরে নিজের শোয়ার ঘরের অন্ধকারে আরাম করিয়া শুইয়া শুইয়া বিমানোর সাধ জাগায় অন্ধ কৃত্তিবাস হাতড়াইয়া হাতড়াইয়া যেই ঘরের দরজার কাছে গিয়াছে, দু’টি কাণে যেন তার পুরুষ ও নারী কণ্ঠের ফিসফিসানির বজ্ৰপাত হইতে আরম্ভ হইয়া গেল। খানিকক্ষণ সে দাড়াইয়া রহিল বাজাহতের মতই, তারপর ফিরিয়া গেল নীচে। পা-ফসকাইয়া সিড়ি দিয়া গড়াইতে গড়াইতে নীচে পড়িয়া গেল, তবু সে থামিল না । অন্ধ মানুষের একা একা এ জগতে বিচরণ করা সম্ভব নয় টের পাইয়া এক বাহির হইয়া যাওয়ার বদলে শুধু সঙ্গে নিল চাকরিটাকে । কোথায় গেল কৃত্তিবাস ভগবান জানেন, কিছুকাল পরে দিবাকরের নামে ডাকে শুধু আসিল একটি দলিল। ভাল আয় হয় বলিয়া পরের পরামর্শে যেসব জমিজমা কৃত্তিবাস বিক্রয় করে নাই, সেগুলি সে দিবাকরকে দান করিয়া দিয়াছে। একে অবশ্য ঠিক দান বলে না, এ একটা নিক্রিয় প্ৰতিশোধের চাল মাত্র। দিবাকরের মত মানুষদের উপর কৃত্তিবাসের মত মানুষরা চিরকাল এইরকম চাল খাটাইয়া আসিতেছে। S9f7