পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাজন

 এই ক্ষুব্ধ আলোচনার জেরটা কাটিয়া যাওয়ার আগেই বিধুশেখর আসিয়া হাজির হয়। অসময়ে, বিনা সংবাদে, একেবারে আলােচনা-সভার মাঝখানে। আলােচনাটা তখন বাঙ্গাকে প্রায় কাঁদাইয়া ছাড়িয়াছে। অন্যবারের মত তাই হাসিমুখে স্বামীকে অভ্যর্থনা করিবার সুযােগটা এবার বাঙ্গার ফস্কাইয়া গেল। বিধু আসিয়া দ্যাখে কি, এবার বাঙ্গার মুখের ভঙ্গিটা বড় খাপছাড়া, বেশভূষাটা বড় বেমানান। গায়ে সেমিজ থাকা দূরে থাক, পরণের কাপড়টাও ময়লা। মুখে হাসি থাকা দূরে থাক, চোখ ঠাসা জল। স্বামী যেন এবার বাঙ্গার আসিয়াও আসে নাই।

 সবচেয়ে বিপদের কথা, এবার বাঙ্গার আত্মসংযম নাই। গত বছর বাঙ্গার বয়স ছিল প্রায় তেতাল্লিশ, কি গভীর আত্মসংযমে গত বছরও নিজেকে সে যুবতী করিয়া রাখিয়াছিল! এবার দিদিমার মত বুড়ী সাজিয়া অসংযমের চরম করিয়া ছাড়িল। চোখ পাকাইয়া বিধুর দিকে চাহিয়া মুখ ভ্যাংচাইয়া বলিল, ‘কেন এলে আজ? কাল আসবে লিখে আজ এলে কেন শুনি? আরে আমার সাতজন্মের ভালবাসার ভাতার! কাল আসবেন লিখে আজ এসেছেন পিরীত করতে!'

 এ বজ্রপাতের সামিল। হাতের স্যুটকেশটা মাটিতে ফেলিয়া বিধু বজ্রাহতের মত তার উপরে বসিয়া পড়িল। একটা বজ্রপাত করিতেই বাঙ্গার সমস্ত বিদ্যুৎ খরচ হইয়া গিয়াছিল, মেয়েমানুষের বিদ্যুৎ আর জীবনশক্তি এক জিনিষ, বাঙ্গাও তাই যেন হঠাৎ মরিয়া গেল। বোকার মত জিভ্ কাটিয়া প্রথমে বলিল, ‘ছি!',—তারপর চারদিকে উদভ্রান্তের মত চাহিয়া বলিল, ‘কি বললাম?’

 বিধু গম্ভীর মুখে জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমার শরীর ভাল নেই?’