পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
২০

 নৌকার শোকে কাতর ভৈরব জবাব দিল না। জলে ঢেউ নাই, কিন্তু স্রোত প্রবল। তিনজনের ভারে ডিঙ্গি নৌকাটির এমন অবস্থা হইয়াছে যে, ঢেউ থাকিলে হয়ত ডুবিয়াই যাইত। আলতামণি হাত বাড়াইয়া ডিঙ্গির প্রান্তটা ধরিতেই ভৈরব জোর করিয়া তার হাত ছাড়াইয়া দিল।

 ‘ডুবিয়ে মারবি নাকি সবাইকে?’

 আলতামণি আবার কাঁদ কাঁদ হইয়া বলিল, ‘অমনি করে ফেলে রাখবে নাকি? মাচানে তোল তবে ধরাধরি করে?’

 ডিঙ্গির মাঝখানে একটা নির্জ্জীব বস্তার মত কানাইকে ফেলিয়া রাখা হইয়াছে, সেখানেও জলের অভাব নাই। শরীরের হাড়গোড় থাকিলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলি এভাবে দুমড়াইয়া মুচড়াইয়া গা এলাইয়া পড়িয়া থাকা যে মানুষের পক্ষে সম্ভব কানাইকে দেখিলে বিশ্বাস হয় না। তবে কানাইয়ের পড়িয়া থাকিবার ভঙ্গির জন্য নয়, অতটুকু ডিঙ্গিতে এতগুলি লোকের থাকা নিরাপদ নয় বলিয়াই ভৈরব আর মহিম পরামর্শ করিয়া কানাইকে মাচানে তুলিবার কষ্টটা স্বীকার করাই স্থির করিয়া ফেলিল। এ বন্যা, আর কিছু নয়। নদীর বাঁধ কতটুকু ভাঙ্গিয়াছে কে জানে, কতখানি ভাঙ্গিবে তাই বা কে জানে। এমন বন্যা আর কখনও হয় নাই, এর চেয়ে ভয়ানক, এর চেয়ে সর্ব্বনাশকারী বন্যা কল্পনা করা অসম্ভব, তবু এখনও কিছু বলা যায় না। এ বন্যা, আর কিছু নয়। হয়ত হঠাৎ প্রবল গর্জন করিতে করিতে কোথাকার আটকানো জলরাশি ছুটিয়া আসিবে। তাদের চিহ্নও আর খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। তা ছাড়া, আলতামণি কানাইকে এভাবে ডিঙ্গিতে পড়িতে থাকিতেও দিবে না, সে নিজে ডিঙ্গিতে উঠিয়া আসিবেই। একজনের ডিঙ্গিতে চারজন উঠিলে চলিবে কেন?