পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩
মমতাদি

 তখনও তার চাকরীর একমাস বোধ হয় পূর্ণ হয়নি। একদিন স্কুল থেকে বাড়ী ফেরবার সময় দেখলাম জীবনময়ের গলির মোড়ে ফেরিওয়ালার কাছে কমলা লেবু কিনছে।

 সঙ্গে নেবার ইচ্ছা নেই টের পেয়েও এক রকম জোর করেই বাড়ী দেখতে গেলাম। দু’টি লেবু কিনে আমাকে সঙ্গে নিয়ে সে গলিতে ঢুকল। বিশ্রী নোংরা গলি। কে যে ঠাট্টা করে এই যমালয়ের পথটার নাম জীবনময় লেন রেখেছিল! গলিটা আস্ত ইঁট দিয়ে বাধানো, পায়ে পায়ে ক্ষয় হয়ে গেছে। দুদিকের বাড়ীর চাপে অন্ধকার, এখানে ওখানে আবর্জ্জনা জমা করা আর একটা দূষিত চাপা গন্ধ। আমি সঙ্কুচিত হয়ে তার সঙ্গে চলতে লাগলাম। সে বলল, মনে হচ্ছে পাতালে চলেছ, না?

 ও কথা মনে হলেও ভদ্রতার খাতিরে অস্বীকার করলাম। সে হেসে কি বলতে গিয়ে থেমে গেল। হঠাৎ পথের ধারে ঘেঁষে দাঁড়াল।

 গলি দিয়ে দুএকটি লোক চলছিল, মমতাদির সর্ব্বাঙ্গে চোখ বোলানোতেই অভদ্রতার সীমা রেখে। একটি মাঝ বয়সী খুব ফর্সা লোক কিন্তু এই সীমা অতিক্রম করে গেল। মমতাদির গা ঘেঁষে যাবার সময় চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছ?

 লোকটির চেহারা ও পোষাক দুয়েরই দিব্যি জলুষ। এই গলি দিয়ে তার হেঁটে চলা যেন গলিটাকে পরিহাস করা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার মুখ দেখে মনের ভাব অনুমান করার চেষ্টা করতে করতে মমতাদি বলল, ‘আমার আত্মীয় হয়—ঠাট্টার সম্পর্ক।’

 সাতাশ নম্বরের বাড়ীটা দোতলা নিশ্চয়, কিন্তু যতক্ষুদ্র দোতলা হওরা সম্ভব। সদর দরজার পরেই ছোট একটি উঠান, মাঝামাঝি কাঠের