পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাজন

কাটিবে মাস কাটিবে বছর কাটিবে, স্বাভাবিক অথবা অস্বাভাবিক নিয়মে বাঙ্গার চুল সাদা হইয়া আসিবে, চামড়া লোল হইয়া পড়িবে, কোমর বাঁকিয়া যাইবে,—বিধুশেখর আসিবে না। বছরে চারিদিনের জন্যও আসিবে না, একদিনের জন্যও আসিবে না। ত্রিশ বছরের নিয়মটা ভাঙ্গিয়া যাইবে। না মরিলেও দুজনের প্রত্যেকের মনে হইবে, হয় সে নিজে নয় অপর জন মরিয়া গিয়াছে।

 পূজার সময় চারদিনের জন্য বিধুশেখর বাড়ী আসে। কবে আসে সেটা নির্দ্দিষ্ট থাকে না, কোন বছর পূজার দুদিন আগেই আসিয়া পড়ে, কোন বছর পূজার মধ্যে কোন একটা দিন আসিয়া হাজির হয়। গুনিয়া গুনিয়া চারিটি দিন সে থাকে তাও নয়। কোনবার একদিন কমও থাকে কোনবার একদিন বেশীও থাকে। চারিদিনের হিসাবটা বাঙ্গার ত্রিশ বছরের গড়পড়তায় হিসাব—এ হিসাব বাঙ্গার একেবারে নিজস্ব। বছরে চারদিনের জন্য স্বামীকে কাছে পাইবে বাঙ্গার এই আশা, ভরসা ও বিশ্বাস—নিজের প্রাপ্য সম্বন্ধে ধারণা। বছর ভরিয়া এটা কল্পনার কাজে লাগে। বিধুশেখর একদিন কম থাক আর একদিন বেশী থাক সেজন্য কিছু আসিয়া যায় না, ওটা সাময়িক লাভ লােকসানের ব্যাপার।

 ‘মােটে তিনদিন থাকবে এবার?’

 এই কথাটা বলিবার সময়টুকুর মধ্যেই প্রায় বুকটার ধড়াস ধড়াস সামলাইয়া অন্ধকার পৃথিবীতে আলো আবিষ্কার করিয়া আত্মসম্বরণ করিয়া ফেলিতে পারে—নিজের ব্যথা ভুলিয়া স্বামীকে দরদ দেখানাের কর্ত্তব্য পালন করিতে আর স্বামীকে কাছে পাওয়ার জন্য তার যে আনন্দের সীমা নাই এই ভাবটা আবার মুখে ফুটাইয়া তুলিতে বড় জোর আরও ততটুকু সময় লাগে। বাস্, যেমন বাঙ্গা ছিল, আবার