পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ess সাধনা। জেবউন্নিসার সহিত ইতিহাসের যোগ আছে বটে কিন্তু সে যোগ গৌণভাবে । সে যোগটুকু না থাকিলে এ গ্রন্থের মধ্যে তাহার কোন অধিকার থাকিত না । যোগ আছে কিন্তু বিপুল ইতিহাস তাহাকে গ্রাস করিয়া আপনার অংশীভূত করিয়া লয় নাই, সে আপনার জীবনকাহিনী লইয়া স্বতন্ত্রভাবে দীপ্যমান হইয়া উঠিয়াছে। । সাধারণ ইতিহাসের একটা গৌরব আছে। কিন্তু স্বতন্ত্র মানক জীবনের মহিমাও তদপেক্ষ নুনি নহে। ইতিহাসের উচ্চচূড় রথ চলিয়াছে, বিস্মিত হইয়া দেখ সমবেত হইয়া মাতিয়া উঠ, কিন্তু সেই রথচক্রতলে যদি একটি মানবহৃদয় পিষ্ট হইয়া ক্ৰন্দন করিয়া মরিয়া যায় তবে তাহার সেই মৰ্ম্মান্তিক আৰ্ত্তধ্বনিও-রথের চুড়া যে গগনতল স্পর্শ করিতে স্পৰ্দ্ধা করিতেছে—সেই গগনপথে উচ্ছ, { সিত হইয়া উঠে, হয় ত সেই রথচূড়া ছাড়াইয়া চলিয়া যায়। । বঙ্কিম বাবু সেই ইতিহাস এবং মানব উভয়কেই একত্র করিয়া এই ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করিয়াছেন। তিনি এই বৃহৎ জাতীয় ইতিহাসের এবং তীব্র মানব ইতিহাসের পরস্পরের মধ্যে কিয়ৎ পরিমাণে ভাবেরও যোগ রাখিয়াছেন। মোগল সাম্রাজ্য যখন সম্পদে এবং ক্ষমতায় স্ফীত হইয়া একান্ত স্বার্থপর হইয়া উঠিল, যখন সে, সম্রাটের পক্ষে হ্যায়পরতা অনী বশ্যক বোধ করিয়া, প্রজার সুখদুঃখে একেবারে অন্ধ হইয়া পড়িল, তখন তাহার জাগরণের দিন উপস্থিত হুইল । বিলাসিনী জেবউন্নিসাও মনে করিয়াছিল সম্রাটুছহিতার পক্ষে প্রেমের আবশুক নাই, সুখই একমাত্র শরণ্য। সেই জর্থে অন্ধ হইয়া যখন সে দয়াধৰ্ম্মের মস্তকে আপন জরি-জহরৎজড়িত . পাছকাখচিত সুন্দর বামচরণখানি দিয়া পদাঘাত করিল - তখন কোন অজ্ঞাত গুহাতল হইতে কুপিত প্রেম জাগ্রত হইয় তাহার शृं রাজসিংহ । মন্মস্থলে দংশন করিল, শিরায় শিরায় মুখমন্থরগামী রক্তস্রোতের মধ্যে একেবারে আগুন বহিতে লাগিল, আরামের পুষ্পশয্যা চিতা শয্যার মত তাহাকে দগ্ধ করিল—তখন সে ছুটিয়া বাহির হইয়া উপেক্ষিত প্রেমের কণ্ঠে বিনীত দীনভাবে সমস্ত মুখসম্পদের বরমাল্য সমর্পণ করিল—দুঃখকে স্বেচ্ছায় বরণ করিয়া হৃদয়াসনে অভিষেক করিল। তাহার পরে আর সুখ পাইল না কিন্তু আপন সচেতন অন্তরাত্মাকে ফিরিয়া পাইল । জেউন্নিসা সম্রাট্রপ্রাসাদের অবরুদ্ধ অচেতন আরামগর্ভ হইতে তীব্র যন্ত্রণার পর ধুলায় ভূমিষ্ট হইয়া উদার জগতীতলে জন্মগ্রহণ করিল। এখন হইতে সেঅনন্ত জগৎবাসিনী রমণী । ইতিহাসের মহা কোলাহলের মধ্যে এই নবজাগ্রত হতভাগিনী নারীর বিদীর্ণপ্রায় হৃদয় মাঝে মাঝে ফুলিয়া ফুলিয়া কাদিয়া কাদিয়া উঠিয়া রাজসিংহের পরিণাম অংশে বড় একটা রোমাঞ্চকর সুবিশাল করুণ ও ব্যাকুলত বিস্তার করিয়া দিয়াছে। দুৰ্য্যোগের রাত্রে একদিকে মোগলের অভ্ৰভেদী পাষাণপ্রাসাদ ভাঙ্গিয়া ভাঙ্গিয়া ড়িতেছে আর এক দিকে সৰ্ব্বত্যাগিনী রমণীর অব্যক্ত ক্ৰন্দন টিয়া ফাটিয়া উঠিতেছে ; সেই বৃহৎ ব্যাপারের মধ্যে কে তাহার প্রতি দৃকপাত করিবে—কেবল যিনি অন্ধকার রাত্রে অতন্দ্র থাকিয়া প সমস্ত ইতিহাসপৰ্য্যায়কে নীরবে নিয়মিত করিতেছেন তিনি এই বুলিলুণ্ঠমান ক্ষুদ্র মানবীকেও অনিমেষ লোচনে নিরীক্ষণ করিতেছিলেন । , t - এই ইতিহাস এবং উপন্যাসকে এক সঙ্গে চালাইতে গিয়া উভয়কেই এক রাশের দ্বার বাধিয়া সংযত করিতে হইয়াছে। ইতিহাসের ঘটনাবহুলতা এবং উপন্যাসের হৃদয়বিশ্লেষণ উভয়কেই কিছু ধৰ্ব্ব করিতে হইয়াছে-কেহ কাহারও অগ্রবর্তী না হয় এ বিষয়ে