পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- সাধনা। نده | কাজেই অকালী সিং দরজা খুলিয়া দিল। তারপর চাপরাসীকে বসাইয়া এবং তাহাকে তামাক চকমকী কলিকা দিয়া তাহার আহারাদির ব্যবস্থার জন্য ভগীদাসীকে উঠাইতে গেল। দ্বাদশ পরিচ্ছেদ । অকালী সিং যথাসম্ভব অনুচ্চস্বরে ভগীকে ডাকিলেও ভগীর সঙ্গে সঙ্গে স্বরবালারও নিদ্রাভঙ্গ হইল। এবং ভগী প্রদীপ হন্তে নীচে আসিলে সেও সুতরাং নামিয়া আসিল। উভয়ে একটু একটু উদ্বিগ্ন হইয়াই আসিয়াছিল—কেন না এত রাত্রে জমাদার কখন তাহাদিগকে ডাকিয়া উঠায় না। দুর্ভাবনায় অকালী সিংএর সৌম্য মুক্তি দণ্ড দুই তিনের ভিতরেই কেমন শুষ্ক বিশুষ্ক হইয়া উঠিয়াছিল, তাহার উজ্জল চক্ষু দুটি হইতে একটা শূন্ত বিষাদের ভাব প্রতিভাত হইতেছিল। প্রদীপের আলোক অকালীর মুখে চোখে পড়িবামাত্র ভগী ও সুরবালা যুগপৎ চমকিয়া উঠিল। - - “কি হয়েচে জমাদার, কি হয়েচে জমাদার” বলিয়া সুরো আদরে অকালী সিংহের কাধ দুটিতে তাহার কচি কচি হাত দুখানি রাখিল। তাহাতে একটা অনিৰ্ব্বচনীয় অপত্যস্নেহম্পশতুল্য বিমল সুখ অনুভব করিয়া অকালী সিং আপনার উদ্বেলিত হৃদয়ভাব গোপন করিতে গিয়া দুই ফোটা চোকের জল না ফেলিয়া থাকিতে পারিল না। আপনার বস্ত্রাঞ্চলে তাহার চক্ষু মুছাইয়া দিয়া সুরবালা কাতরকণ্ঠে বলিল “জমাদার, তুমিও বুজি আমার মতন স্বপন দেখেছে ? তা স্বপনে আপনার মন্দ দেখুলে পরের মন্দ হয়—নয় ভগী বেটা ? . . . আমিও একটা ভারি ভয়ের স্বপন এই মাত্তর দেখছিলাম। জমাদার। কে যেন তোমায় আমাদের দেউড়া থেকে চুরী করতে এয়েছে। SAeBBeSBBBeYJeS করিয়া সে স্থির বুঝিয়াছিল, রজনী প্রভাতে তাহার সঙ্গে সঙ্গে প্রভূ ভূমি বললে দিদি হুকুম দাও, ওর মাথা কেটে আনি।” এমন সময়ে । তুমি ডাক্‌লে আর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । . . . . . . . অকালী সিং দেখিল এই স্বপ্ন নিতান্ত ভিত্তিহীন নহে। দেবী । বুঝি এই স্বপ্নচ্ছলে সরল বালিকার কোমল হৃদয় আগে হইতেই প্রস্তুত করিয়া রাখিতেছেন। স্থির কণ্ঠে অকালী বলিল “দিদি, . আমিও স্বপ্নে দেখেছি, তোমার দেউড়ী থেকে আমায় ধরে নিয়ে । যাবে। কিন্তু আমি আবার ফিরে আসব !” ভগী বলিল,—“জমাদার, আজ দেড় কুড়ি বছর এই মনিববাড়ীতে এক সঙ্গে আছি, তোমার চেহারা কখন এত খারাপ । দেখিনি ! সত্যিই কি তুমি আমাদের ছেড়ে যাবে ? এই বৃহৎ । পুরীতে এক স্কুরোকে নিয়ে কি করে কাটবে?” ভগী বস্ত্রাঞ্চলে চক্ষু মুছিল । । ... . . . . . . . ." অকালী সিং দেখিল, যাহা সে আশঙ্কা করিয়াছিল তাহা হইতে বসিয়াছে। অতএব মুখ বিকৃত করিয়া ভগীকে ভ্যাঙ্গাইয়া সে স্বরোদিদিকে হাসাইয়া দিল এবং বলিল যে, স্বরোদিদি ও সে দুই । ভাই বোনে ছেলেমানুষ, স্বপন দেখে তার কাদচে বলে “বুড়চি” । ভগীর কাদবার কি এক্তিয়ার। কাজেই ভগী বিপদের কোন কথা তখন বুঝিতে পারিল না। সুরবালাও নিশ্চিন্ত মনে নিদ্র গেল । - কলেক্টর সাহেবের চাপরাসী অতঃপর পরিতোষপূর্বক ভোজন করিয়া শয়ন করিল। অকালী সিং সমস্ত রাত্রির মধ্যে একবারও চক্ষু বুজিতে পারে নাই। সেদিনকার ঘটনাপরম্পরা আলোচন । কন্যার অদৃষ্ট পরীক্ষিত হইবে।