পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

esv. সাধনা । । ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ । অকালী সিং মোকদম মামলার কিছু কিছু বুঝিত। ইংরেজ রাজত্বে বিচার যে ধনসম্পত্তিগত এবং সকলতাতেই “সাবুদের" জয়, ইহা সে বড় এবং ছোট তরফের বিস্তর মোকদ্দমায় প্রত্যক্ষ দেখিয়াছিল। অতএব তাহার অবর্তমানে স্বরোদিদির কি দশ হইবে ভাবিতে গিয়া এক একবার যখন তাহার বুক ফাটিয়া যাই তেছিল, আশা তখন দুষ্ট সরস্বতীর মত তাহার কানে কানে বলিতেছিল “ভয় কি, তুমি যে নেমকহারামটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছ, তার সাক্ষী কে ?” ইহাতে প্রথম প্রথম একটু আশ্বস্ত হইলেও অকালী সিংএর ধৰ্ম্মবুদ্ধিতে আঘাত লাগিতেছিল। আত্মরক্ষার জন্ত আদে তাহার ভাবনা হয় নাই। কিন্তু প্রভুর মৃত্যুশয্যাপার্থে সেই যে আজীবনের প্রতিশ্রুতি, তার সঙ্গে বীরধৰ্ম্মের কৰ্ত্তব্যজ্ঞানকে অনেক ক্ষণ যুঝিতে হইয়াছিল। “প্রাণ থাকিতে সুরোকে কি করিয়া নিরাশ্রয় অবস্থায় ফেলিয়। যাইব ? প্রভু প্রমথনাথ স্বর্গে বসিয়া কি আমার নেমকহারামি দেখিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিবেন না !” এই চিন্তা অকালী সিংকে আকুল করিয়া তুলিতেছিল। কিন্তু এদিকে প্রমাণ নাই বলিয়াই কি সে কাপুরুষের মত মিথ্যtছলনায় জীবনভার বহন করিবে ? যদি কেহ জিজ্ঞাসা করে, অকালী সিং সিদ্ধেশ্বর রায়ের এ দশ কে করিল জান, তখন কি অকালী যে-সে মানুষের মত আপনার কৃতকাৰ্য্য অস্বীকার করিয়া বসিবে ? ঠিক ! অকালী সিং হইতে তাহা হইবে না। অতএব কৃতজ্ঞতায় এবং বীরধৰ্ম্মে প্রায় সমস্ত রাত্রি যে দ্বন্দ্ব বাধিয়াছিল, প্রভাত হইতে না হইতে তাহার একটা চূড়ান্ত নৃিপত্তি করিয়া জমাদার অপেক্ষাকৃত প্রফুল্ল হৃদয়ে শয্যা ত্যাগ করিল। কালেক্টর সাহেবকে অভ্যর্থনা করিবার জন্য অকালী সিং যথাসাধ্য উদ্যোগ আয়োজন করিল। প্রমথনাথ বিস্তর ব্যয়ে এবং পরম যত্নে আপনার বৈঠকখানা স্থসজ্জিত করিয়াছিলেন। তাহার । মৃত্যুর পর তাহার সে পূৰ্ব্ব সৌষ্ঠব না থাকিলেও অকালী সিংহের । যত্নে কিছুই তেমন বিকৃত হইতে পায় নাই স্বহস্তে অকালী রোজ । প্রাতে আসবাবগুলির ধূলি মার্জিত করিয়া দিত, প্ৰভু যেখানে । যাহা রাখিতেন তাহার কোন অন্যথা হইতে দিত না—প্রাতে । সন্ধ্যায় প্রভুর তৈলচিত্রের প্রতিমূৰ্ত্তিখানি দেখিতে দেখিতে সজল । নেত্ৰে উদ্দেশে তাহাকে নমস্কার করিত। অনেক দিনের পর তাহার সেই দেবমন্দিরের সমস্ত দ্বার জানালা খুলিতে খুলিতে অকালী সিং মথিত হৃদয়ে বারম্বার অশ্রু ত্যাগ করিল। তার পর । সম্মুখস্থ অযত্বরক্ষিত উদ্যানে কালেক্টর সাহেবের আহারাদির জন্য একটা পুরাতন অসংস্কৃত র্তাবু খাড়া করাইয়া দিল, নিজের নিত্যকৰ্ম্মগুলি শেষ করিয়া তাহার জমাদার যখন অনেকদিনের রাঙ্গা পোসাক এবং জরি দেওয়া পাগড়ি মাথায় দিয়া দেউড়ীতে সশস্ত্র হইয়া দাড়াইল, স্বরেীবালাকে ভগী তখন স্নান করাইতেছিল। কিন্তু সে খবর পাইবামাত্র স্বরে ভিজে মাথায় ভিজে কাপড়ে । দৌড়িয়া আসিয়া অকালী সিংকে দেখিতে দেখিতে হাসিয়া আকুল । হইল। অন্ত সময়ে অকালী এই হাস্যে উৎফুল্ল হইয়া উঠিত, আজ তাহার, চক্ষে জল আসিল . বড় তরফেও কালেকটর সাহেবের আগমনবার্তা পৌঁছিয়াছে ! ম্যানেজার গুরুতর আহত হইয়া অজ্ঞানাবস্থায় ছিলেন। ভূতে তাহার সে দশা করিয়াছে প্রচার হওয়ায় মহা হুলস্থল পড়িয়া গেছে। কত্রী ঠাকুরাণী শুনিয়া বলিলেন “দেখলে, পরের মন্দ । করতে গেলে আপনার মন্দ আগে হয়। ভাগ্যিস আমি মিছে ।