পাতা:সাধনা (তৃতীয় বর্ষ, প্রথম ভাগ).djvu/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্থাপন করিয়া গিয়াছেন। তিনিই সুমাদিগের নিকট যথার্থ । শোকের মধ্যে সাত্বনা, অবনতির মধ্যে আশা, শ্রান্তির মধ্যে উৎসাহ - এবং দারিদ্র্যের শূন্ততার মধ্যে চির-সৌন্দর্য্যের অক্ষয় আকর উদঘা- ৷ টিত করিয়া দিয়াছেন । আমাদিগের মধ্যে যাহা কিছু অমর এবং আমাদিগকে যাহা কিছু অমর করিবে সেই সকল মহাশক্তিকে । ধারণ করিবার পোষণ করিবার প্রকাশ করিবার এবং সৰ্ব্বত্র প্রচার করিবার একমাত্র উপায় যে মাতৃভাষা তাহাকেই তিনি বলীয়ান এবং মহীয়ান করিয়াছেন। আমাদের যে অন্তঃপুরে স্বৰ্য্যকিরণ এবং বায়ু প্রবেশ নিষেধ সেখানে তিনি নিখিল বিশ্বের - আনন্দ প্রবাহ সমীরিত করিবার পথ করিয়া দিয়াছেন, এবং যে বাঙ্গালী হৃদয় অনেক বয়স পৰ্য্যন্ত অন্তরের মধ্যে অপরিচিত দুৰ্ব্বোধ । বিদেশীয় সাহিত্য সম্পূর্ণ গ্রহণে অসমর্থ হইয়া চিরজন্মের মত অপরিপুষ্ট উপবাসকৃশ এবং হীনবল হইয়া থাকে তাহার দ্বারদেশে তিনি খাদ্য উপনীত করিবার ব্যবস্থা করিয়া গিয়াছেন। আমরা অপরাপর জাতির নিকট চিরদিন ঋণ গ্রহণ করিয়া অবশেষে কথঞ্চিৎ সুদসমেত তাহ পরিশোধপূর্বক যাহাতে নিজের নিকট আত্ম-সম্মান এবং পরের নিকট শ্রদ্ধার অধিকারী হইতে পারি এমন সুবিধা তিনি করিয়া দিয়াছেন । । রচনাবিশেষের সমালোচনা ভ্রান্ত হইতে পারে—আমাদিগের নিকট যাহা প্রশংসিত কালক্রমে শিক্ষা রুচি এবং অবস্থার পরি বর্তনে আমাদের উত্তর পুরুষের নিকট তাহ নিন্দিত এবং উপেক্ষিত হইতে পারে কিন্তু বঙ্কিম বঙ্গভাষার ক্ষমতা এবং বঙ্গসাহিত্যের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করিয়া দিয়াছেন ; তিনি ভগীরথের স্থায় সাধনা করিয়া বঙ্গসাহিত্যে ভাবমন্দাকিনীর অবতারণ করিয়াছেন এবং সেই । পুণ্যস্রোতাপর্শে জড়ত্বশাপ মোচন করিয়া আমাদের প্রাচীন ভয়-- বঙ্কিমের জন্য অন্তরের সহিত রোদন করিয়া উঠিয়াছে। কিন্তু । তিনি এই শোকোচ্ছাসের অতীত শাস্তিধামে দুষ্কর জীবনযজ্ঞের অবসানে নিৰ্ব্বিকার নিরাময় বিশ্রাম । লাভ করিয়াছেন | श्झद्र পরে তাহার মুখে একটি কোমল প্রসন্নতা, একটি সৰ্ব্বদু:খতাপ হীন গভীর প্রশাস্তি উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছিল—যেন জীবনের মধ্যাহ্বরৌদ্রদগ্ধ কঠিন সংসারতল হইতে মৃত্যু তাহাকে স্নেহ-স্বশী - তল জননীক্রোড়ে তুলিয়া লইয়াছে। আজ আমাদের বিলাপ পরিতাপ তাহাকে স্পর্শ করিতেছে না, আমাদের ভক্তি-উপহার গ্রহণ করিবার জন্য সেই প্রতিভাজ্যোতিৰ্ম্ময় সৌম্য প্রসন্নমূৰ্ত্তি এখানে উপস্থিত নাই। আমাদের এই শোক এই ভক্তি কেবল আমাদেরই কল্যাণের জন্ত । বঙ্কিম সাহিত্যক্ষেত্রে যে আদর্শ স্থাপন করিয়া গিয়াছেন এই শোকে এই ভক্তিতে । সেই আদর্শপ্রতিমা আমাদের অন্তরে উজ্জ্বল এবং স্থায়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত হউক প্রস্তরের মূৰ্ত্তি স্থাপনের অর্থ এবং সামর্থ্য আমাদের যদি না থাকে, তবে একবার তাহার মহত্ত্ব সৰ্ব্বতোভাবে মনের মধ্যে উপলব্ধি করিয়া । তাহাকে আমাদের বঙ্গহৃদয়ের স্মরণস্তম্ভে স্থায়ী করিয়া রাখি। ইংরাজ এবং ইংরাজের আইন চিরস্থায়ী নহে ; রাজনৈতিক, ধৰ্ম্মনৈতিক, সমাজনৈতিক মতামত সহস্রবার পরিবৰ্ত্তিত হইতে পারে ; যে সকল ঘটনা যে সকল অনুষ্ঠান আজ সর্বপ্রধান বলিয়া বোধ o হইতেছে এবং যাহার উন্মাদনার কোলাহলে সমাজের খ্যাতিহীন । শব্দহীন কৰ্ত্তব্যগুলিকে নগণ্য বলিয়া ধারণা হইতেছে কাল তাহার । স্মৃতিমাত্র চিত্নমাত্র অবশিষ্ট থাকিতে না পারে ; কিন্তু যিনি আমাদের মাতৃভাষাকে সৰ্ব্বপ্রকার ভাবপ্রকাশের অনুকুল করিয়া গিয়াছেন তিনি এই হতভাগ্য দরিদ্র দেশকে একটি অমূল্য চিরসম্পদ । দান করিয়াছেন। তিনি স্থায়ী জাতীয় উন্নতির একমাত্র মূল উপায় ।