পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

মুখ দর্শন করতেন না ব’লে মাধবী দেবীকে আড়াল থেকে লুকিয়ে তাঁর ভাবে ভোলা মূর্তি দেখতে হ’ত। গুরুর কাছে বসবার অধিকার তিনি কোনো দিন পান নি, সে দুঃখ তাঁর জীবনে যে যায়নি, নিম্নলিখিত পদটিতেও তার সেই বঞ্চিত জীবনের মর্মবেদনাটুকু ফুটে উঠেছে।

“যে দেখয়ে গোরা মুখ সেই প্রেমে ভাসে।
মাধবী বঞ্চিত হ’ল নিজ কর্মদোষে॥”

 প্রেমাবতার গুরুকে নারী-বিদ্বেষী ব’লে তিরস্কার করতে তাঁর মন চায়নি, কারণ নারীর সঙ্গ সন্ন্যাসীর পক্ষে ক্ষতিকর হ’তে পারে তা’ তিনি জানতেন, সেই জন্য নিজের কর্মকেই তিনি দোষ দিয়েছেন, তাঁর নারীজন্মের জন্য। চরিতামৃতের মতে চৈতন্যদেব ‘রাধিকার গণ’ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠভক্ত বলে সাড়ে তিনজনকে ধরতেন। স্বরূপ, দামোদর, রামানন্দকে পুরো তিনজন আর মাধবীদেবীকে নারী ব’লে আধ জন ধরা হ’ত।গুরু এতবড় সম্মানের মধ্যেও অর্থাৎ লক্ষ লক্ষ ভক্তের মধ্যে চারজনের অন্যতম ব’লে ধরেও নারী ব’লে তাঁকে সম্পূর্ণ সম্মানদিতে পারেননি কিন্তু উড়িষ্যাধিপতি প্রতাপরুদ্র তাঁকে বহু পুরুষের চেয়ে যোগ্যতম বিবেচনা কর’তেন, তার প্রমাণ রাজসভায় বহু পণ্ডিত থাকতেও জগন্নাথ-মন্দিরের দৈনিক বিবরণ লেখার ভার তাঁর উপর দিয়েছিলেন। মাধবীর সুন্দর স্বভাব, অগাধ পাণ্ডিত্য ও শাস্ত্রজ্ঞান এবং নিরাড়ম্বর জীবন সে যুগের বৈষ্ণব নারীদের আদর্শ ছিল। তাঁর রচনার নমুনাস্বরূপ:

“কলহ করিয়া ছলা,  আগে পহু চলি গেলা,
   ভেটিবারে নীলাচল রায়।