পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

তারা ছাড়া আর কে বুঝবে? পৌষ মাসের শীতে হরিণ মাংসের বদ্‌লা পাওয়া পুরাতন খোস্‌লা তা’ এমন ধূলি ধূসরিত হয়ে গেছে, যে গায়ে দিলে চোখ চাইবার উপায় থাকে না। এই তো তাদের দশা। ফাল্গুন চৈত্রেও ঐ একই কাহিনী। পায়ে তাপ, মাথায় রোদ উদরে ক্ষুধার দাহন। বাংলার,—তথা ভারতের মূর্তিমতী দুঃখ ভারাতুরা নারী! চির বুভুক্ষায় কঙ্কাল সার, মৃত্যু-সীমানার মধ্যে প্রবিষ্ট হ’তে পাদ মাত্র বাকী, অথচ কোন মহামন্ত্রের সিদ্ধিতে লোভ মোহের অতীত বুদ্ধি, অন্তর ঐশ্বর্যে মহীয়সী গরীয়সী। অতুল ঐশ্বর্যের প্রলোভনেও একান্ত অনড়। এরা ধর্মকে পশুমাংসের মত ওজনদরে বেচেনা। পশু বলি দেয় এবং সেই সঙ্গে নিজের পশুত্বকেও এরা বলি দিয়ে দিয়েছে। উচ্চ শ্রেণীর মত, দুলালী ধনীকন্যাদের মত সে শিক্ষিতা হয়নি। তাই বুদ্ধি বুঝি তার এমন অপরিপক্ক? নিজের ভাল বোঝবার সাধ্য হয়ত তার নেই। পতি-পত্নীর সমান অধিকার সে জানেনা। দারিদ্র্যে পিষ্ট হয়েও সে স্বামীকে ছেড়ে পালায় না। উলটে সুন্দরী নারীর প্রলোভনে পড়ে তার ঐশ্বর্যের লোভে পাছে স্বামী ধর্মচ্যুত হয়, সেই ভয়ে কাঁদতে বসে। আবার সেই সজল চক্ষের বাড়বাগ্নি জ্বেলে স্বামীকে কঠোর কণ্ঠে তীব্র ভর্ৎসনা করে;—

“কি লাগিয়া বীর এবে পাপে দিলে মন?
যেই পাপে নষ্ট হইল লঙ্কার রাবণ।
পিঁপিড়ার পাখা ওঠে মরিবার তরে,
কাহার ঘোড়শী ভার্য্যা আনিয়াছ ঘরে?”

 আবার ছদ্মবেশিনী দেবীকেও উপদেশ দেয়;—