পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
৩৪১

“স্বদেশ, স্বদেশ করিস কা’রে এ-দেশ তোদের নয়”,—এবং কেন নয়, সে-কথাও তিনি ভাল করেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

 ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে জাতীয় জাগরণের ঊষালোকে বাঙ্গালী নূতন করে নারীজাতীর মাহাত্ম্য উপলব্ধি করল। বাইরের জগতে অধীনতার অপমান, তার নিরুপায় অক্ষম অবস্থা তাকে যত বেশী পীড়া দিতে লাগল; ততই সে নিজের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে একটা কিছু অবলম্বন খুঁজছিল—যা দুর্বিসহ লজ্জা থেকে এবং আত্ম-অবিশ্বাস থেকে তাকে বাঁচাতে পারে। সেই সময়ে তার দৃষ্টি পড়ল তার অতীত সাহিত্যে, চিরাগত ধর্মে এবং তার সর্বংসহা শক্তিরূপিণী গৃহলক্ষ্মীর প্রতি। এই নারীর নীরব অথচ প্রবল নিষ্ঠার মধ্যে সে তার মুক্তির পথ আবিষ্কার করল, নিজের শ্রেষ্ঠতম আদর্শ খুঁজে পেল। নবযুগের বাংলাসাহিত্য সে-দিন তাই সহসা নারীস্তুতিতে মুখর হয়ে উঠেছিল। বিহারীলাল “সারদা”রূপে যাঁকে অন্তরবাসিনী এবং অন্তঃপুরকল্যাণী কন্যা মাতা এবং বধুরূপে দেখে বলছেন;—

“মানবের কাছে কাছে, সদা সে মোহিনী আছে,
যে যেমন তার ঘরে, তেমনিই মুরতি ধরে।”

 যাকে পেয়ে পরিপূর্ণ তৃপ্তিতে বলেছেন;—

“তুমি লক্ষ্মী সরস্বতী, আমি ব্রহ্মাণ্ডের পতি,
হোক গে এ বসুমতী, যার খুসি তার”

বলেছেন,

“তুমি মোর অমূল্যরতন, যুগযুগান্তরে তপের ফল,
তব প্রেমস্নেহ অমিয়সেবন দিয়েছে জীবনে অমর বল।”

 তাঁকেই সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার সজ্ঞানশ্রদ্ধায় “মহিলা”-কাব্যে বলেছেন;—