পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬২
সাহিত্যে নারী: স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

 কপালকুণ্ডলা” নামটা মালতীমাধব” নাটকের কাপালিকার উদ্ভট নাম থেকে পরিগৃহীত; সেই পরিকল্পনায় সাগবোপকুলনিরাণী কাপালিকের প্রতিপালিতা মেয়েটা ঠিক মিরাখা নয়। একই নির্জনবাস ভিন্ন দু'জনের মধ্যে অপর কোন মিল দেখা যায় না। প্রেম এবং প্রেমপাত্র সম্বন্ধে মিরা ঘোর সংসার বাসিনীদের মতই পূর্ণ সচেতন, আর এই সরলা সন্ন্যাসিনী বঙ্গ মৃগীর মতই চির আত্মভোলা। এই চরিত্রটা উপন্যাসের মধ্যে চমৎকার একটা কাব্যের সৃষ্টি করেছে। কবিচিত্ত দিয়েই একে উপভোগ করতে হয়, তীক্ষ বিচারদৃষ্টি দিয়ে নয়।

 “কমলাকান্তের প্রসঙ্গ গোয়ালিনীর স্তুতি আমরা অনেক আগেই শুনেছি, কিন্তু স্পষ্ট করে বুঝেছি এতকাল পরে এই মহাযুদ্ধঅধ্যুষিত ভরতে তথা বাংলাদেশে বসে। দুগ্ধবতী গাভীকুল-সমন্বিত প্রসার প্রসন্নতা-লাভ যে সাধনানিষ্ঠ ও বহু সাধনালব্ধ সে-বিষয়ে কেহই আজকের দিনে দ্বিমত হবেন না।

 “দুর্গেশনন্দিনী“র দুটি প্রধান নারীচরিত্র আয়েষা এবং বিমলা। আয়েষা আবেগপ্রবণ, অসংযত; বিমলা পরিহাসতলা, উচ্ছল বাহুপ্রকৃতির অন্তরালে সতীত্বের এবং পরিপূর্ণ আত্মসংযমের মূত ছবি। আয়েষা জগৎসিংহকে চেয়েও পান নি, বিমলা পেয়েও ভোগ করেন নি। তিনি বীরেন্দ্রসিংহের বিবাহিতা পঙ্গী হয়েও চিরদুঃখিনী দাসী, তার অবজ্ঞা ও উপেক্ষাঅপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে চিরদিন আত্মগোপন করে থেকেছেন, দাসীর কর্তব্য করে। কিন্তু স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন তিনি যে কোন পরমসোহাগিনী পীর অপেক্ষা বেশী করেই।