পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি

কাল পরে যে ধর্মোন্মাদনা এসেছিল, ক্রমে তার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মানুষের মনে পরলোকের এবং ধর্মের চিন্তা কমে এল। যবন, শক, হুন প্রভৃতি বিদেশী বর্বর জাতিদের আক্রমণে নির্যাতিত এবং বারংবার বিড়ম্বিত হয়ে জনসাধারণ অহিংসাধর্মের প্রতি ক্রমেই শ্রদ্ধা হারাচ্ছিল, শুঙ্গ, কথ এবং গুপ্তরাজগণের অভ্যুদয়ে হিন্দুধর্ম এবং সংস্কৃত ভাষার পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেশে শক্তি চর্চা, আশা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে নিয়ে এল বটে, কিন্তু সাধারণের মধ্যে ধর্মপ্রাণতা পূর্বের পরিমাণে ফিরল না। সস্কৃত নারীকবিদের অধিকাংশ রচনাই পার্থিব প্রেমের জয়গানে এবং প্রকৃতি বর্ণনায় এবং দেব বন্দনায় পরিপূর্ণ। এই বস্তুতান্ত্রিকতার আদর্শ সম্ভবতঃ বৌদ্ধধর্মের চরম উন্নতির দিনেও লুপ্ত হয়নি, সে যুগেও তিষ্যরক্ষিতা, চিঞ্চা, মালবিকাদের অস্তিত্ব থেকে প্রমাণ হয়, ‘মহেন্দ্রের তপোভঙ্গদূত’ এবং স্রষ্টার চক্রান্ত মানবের মুক্তিচেষ্টার রুদ্রতপস্যার পাশে পাশেই সেদিনও সুযোগ অন্বেষণে ফিরছিল, যথাকালে সে আবার আত্মপ্রকাশ করে বহু শতাব্দীর সাধনাকে ভূমিসাৎ করল। মুসলমান-পূর্ব যুগে যে সব ভারতীয় বিদুষী সংস্কৃতে কাব্য রচনা করে গেছেন তাদের মধ্যে ধর্মপ্রবণতার একান্ত অভাব দেখা যায়। অবশ্য দেড় হাজার বছর ধরে ভারতীয় নারী ধর্মচিন্তা ছেড়ে দিয়েছিল, এ কথা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। সে দিনও বৌদ্ধ এবং জৈন বিহারে লক্ষ লক্ষ ভিক্ষুণী বাস করছিলেন এবং ধর্মালোচনা করছিলেন তারও যথেষ্ট প্রমাণ আছে, উভয় ভারতীর মতো মনস্বিনী হিন্দু নারীরা সে দিনও বিরাজিত ছিলেন। দেশে অধ্যাত্ম-বিদ্যার নিয়মিত চুচ্চা না থাকলে উভয়ভারতীর মতো মহাপণ্ডিতার উদ্ভব সহসা