পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

এইরূপ লিখে রাখলেন। এইরূপে সেই দুর্ব্বোধ্য পদটী পদচ্ছেদ দ্বারা সহজবোধ্য হয়েছিল।

 বাংলায় বৈজয়ন্তীর পরবর্তী বিখ্যাত বিদুষী উত্তরবঙ্গের মহামহোপাধ্যায় ইন্দ্রেশ্বর চূড়ামণির কন্যা মানিনী দেবী। তাঁর ভাই ধনেশ্বরকে বর্ণমালা শিখতে দেখেই তাঁর বর্ণশিক্ষা হয়, তাঁকে ব্যাকরণ প’ড়তে দেখেই তিনি ব্যাকরণ শেখেন, এজন্য কাউকে আলাদা কোনো পরিশ্রম ক’রতে হয়নি। পরবর্তী কালে তাঁর পিতার ছাত্রেরা তাঁকে পূজার ফুল তুলে দিয়ে অনেক দুরূহ প্রশ্নের অর্থ জেনে নিত। মানিনী সংস্কৃতে অনেক শ্লোক লিখে গেছেন, এক সময় সেগুলি অনেকের কণ্ঠস্থও ছিল, আজ ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে! তাঁর বিখ্যাত শিবস্তোত্র থেকে তিনটি শ্লোক উদ্ধৃত করছি:

“তরণির্ধরণি সলিলং পবনো, গগনঞ্চ বিরিঞ্চি পুতন্বতনোঃ।
শশলাঞ্ছন ভূষণ চন্দ্রকলা স্তনবস্তব ঘোযয়তে-সচতে॥
তমসি ত্বমসীশ্বর তেজসি চ, প্রমথেশ গিরো জলধৌ বসসি।
অবনৌ গগনে চ গুহাসু পিত র্হৃদয়েহসি বহিশ্চ দধাসি জগৎ॥
করুণাজলধে হরিণাঙ্কশিরো গিরিরাজসুতা-দয়িত প্রণতাং।
তবপদসরোরুহ-কিঙ্করিকাং সকলাদ্ধরমেত্য সমুদ্ধর মাং॥”

 একুশদিনের শিশুপুত্র রেখে পূর্ণযৌবনে তিনি যখন স্বামীর সঙ্গে সহমরণে যান তখন তাঁর পিতৃব্য তাঁকে শাস্ত্রীয় যুক্তি দিয়ে নিরস্ত ক’রতে চেয়েছিলেন, মানিনী শাস্ত্রীয় উদাহরণ দিয়েই তাঁকে পরাস্ত ক’রে হাসিমুখে জ্বলন্ত চিতায় আরোহণ করেন। তাঁর সেই শিশুপুত্র ভবিষ্যতে রুদ্রমঙ্গল ন্যায়ালঙ্কার নামে প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক এবং মহাপণ্ডিত হয়েছিলেন।