পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ সাহিত্য-মীমাংসা কিন্তু আমাদের প্রাচীন ভারতের নমস্ত আচার্যগণ সাহিত্যের স্বরূপ-বিশ্লেষণের পথে কতদূর অগ্রসর হইয়াছিলেন, তাহারা তাহদের অলৌকিক প্রজ্ঞাবলে শিল্প ও কলার উৎকর্ষ ও অপকর্ষ নির্ধারণের যে সকল মানদণ্ড নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন, তাহ আমাদের বর্তমান শিল্প ও সাহিত্য-ক্ষেত্রে কতদূর প্রযোজ্য, এই সমস্ত বিষয়ে আমাদের কোনও অনুসন্ধিৎসাই নাই । অনেকে বলিবেন, সংস্কৃতে সাহিত্য সম্বন্ধে যে বিচারপদ্ধতি তাহা যে বর্তমানের লৌকিক সাহিত্যক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হইবে, ইহা ধারণা করা অন্যায়। প্রাচীন শাস্ত্রকারগণ যে দৃষ্টিতে সাহিত্যের বিচার করতেন, আমাদের বিচার করিবার দৃষ্টি তাহা হইতে বিভিন্ন ও নূতন। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে বর্তমান সাহিত্যের ন্যায় জটিলতা ছিল না। তখন Realism এবং Idealism লইয়। কবি ও সমালোচকগণের মধ্যে কলহের স্বত্রপাত হয় নাই। আধুনিক ভাষার ন্যায় উপন্যাস-সাহিত্য বলিয়া কোনও বিভাগ সংস্কৃত ভাষায় ছিল না । অভিনয় ও নাট্য তখনকার দিনে মানবজীবনের সহিত এত ওতপ্রোতভাবে জড়িত হইয়া উঠে নাই। পৌরাণিক ঘটনাই ছিল কাব্য ও নাট্যের প্রধান অবলম্বন। মহাভারত-রামায়ণের ন্যায় মহাকাব্য, কালিদাসের কুমারসম্ভব রঘুবংশ, মাঘের শিশুপালবধ, ভারবির কিরাতাজনীয়—ইহাদের আদর্শে রচিত কতকগুলি কাব্য, মেঘদূতের ন্যায় কতকগুলি খণ্ডকাব্য, অভিজ্ঞানশকুন্তল উত্তররামচরিত প্রভৃতির অনুকরণে রচিত কতকগুলি পৌরাণিক নাটক, হালকা, নিতান্ত স্কুল ধরণের কতকগুলি প্রহসন, বাণভট্টের হর্ষচরিত ও কাদম্বরীর ছাচে ঢালা কয়েকখানি গদ্যকাব্যই ছিল সাহিত্য-সমালোচকের সমালোচনার যথাসর্বস্ব পুজি—stock-in-trade । আজকাল আধুনিক সাহিত্যে সমালোচনার ক্ষেত্র বহুদিকে প্রসারিত হইয়াছে, সাহিত্যের জটিলতা বাড়িয়াছে, কবিত্বশক্তির ক্রমাভিব্যক্তি ঘটিয়াছে, মানবজীবন ও সাহিত্যের মধ্যে সুগভীর সম্বন্ধ কবি ও সমালোচকগণ উপলব্ধি করিতে পারিয়াছেন। আজ আর পৌরাণিক প্রেমকাহিনী, বীরত্বের কথা পাঠক ও দর্শকের হৃদয়