পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭ সাহিত্য-মীমাংসা কাব্যে রস হউক বলিয়া আদেশ করিলেই সহৃদয়ের চিত্তে রসবন্যার প্রাদুর্ভাব হয় না । ‘গে’ শব্দ শ্রবণ করিলেই যেমন একটি প্রতিনিয়ত প্রাণিবিশেষরূপ অর্থের বোধ হইয়া থাকে, সেইরূপ ‘শুঙ্গার’ শব্দটি শ্রবণ করিলেই যদি শ্রোতার হৃদয়ে শৃঙ্গাররসের আবির্ভাব হইত, তবে রস বাচ্য হইত সন্দেহ নাই। কিন্তু তাহা তো অনুভূত হয় না। বস্তুত যেখানে কোনও বিশিষ্ট রসের বাচক শব্দের দ্বারা সেই রসকে প্রকাশ করা হইয়া থাকে, সেইরূপ স্থলে অালঙ্কারিকগণ কবি-প্রতিভার নূ্যনতা লক্ষ্য করিয়া উহাকে কাব্যদোষের মধ্যে অন্তভূত করিয়াছেন । সুতরাং 'রস' বাচ্য নহে। তবে ইহা কি ? সাহিত্য-মীমাংসকগণ রসকে ‘ব্যঙ্গ্য’ বলিয়াছেন, “স এষ পরমো ব্যঙ্গ্যঃ” । “ব্যঞ্জনা’র দ্বারা রসের বোধ হইয়া থাকে, এবং আভাস ও ইঙ্গিতের দ্বারা প্রকাশ করাই ব্যঞ্জনা-শক্তির বৈশিষ্ট্র্য । কবি যখন "করুণ’রসের অবতারণা করিতে যান, তখন কেবলমাত্র হা-হুতাশের দ্বারা তাহার কাব্য পূর্ণ করেন না। করুণ রসের ব্যঞ্জনার উপযোগী সামগ্রী তাহার কাব্যে সমাবেশ করিয়া থাকেন এবং এই সামগ্রীর যথোপযুক্ত সমাবেশের দ্বারাই কবি সহৃদয় শ্রোতার হৃদয়ে অভিলষিত রস অভিব্যক্ত করিতে সমর্থ হন। রসাভিব্যক্তির এই সামগ্রী কি ? ভরতাচার্য র্তাহার নাট্যশাস্ত্রে এই সামগ্রীর চারিটি বিশিষ্ট বিভাগ বা শ্রেণী নির্দেশ করিয়াছেন । বিভাব, অমুভাব, স্থায়িভােব এবং সঞ্চারিভাব । ইহাদের প্রত্যেকটিই রসাচুভূতির অপরিহার্য উপাদান। বিভাব ও অতুভাব রসাভিব্যক্তির বাহ উপাদান, উহারা জড়জগতের অন্তভুক্ত। বহিরিন্দ্রিয়ের দ্বারা উহাদের উপলব্ধি সম্ভবপর। স্থায়িভাব ও সঞ্চারিভাব, রসচর্বণার আস্তর উপাদান, উহার সহৃদয়ের মনোজগতের সহিত সংশ্লিষ্ট । সুতরাং উহাদের স্বরূপবিচার পরভাবী । বিভাব’ শব্দের অর্থ ‘কারণ। কিসের কারণ ? রসাচুভূতির । মানবের চিত্তবৃত্তির সহিত জড়জগতের অতি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ বিদ্যমান। সাধারণ দৃষ্টিতে মনোজগতের সহিত জড়জগতের কোন সম্বন্ধই যেন নাই । ইহারা যেন