পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ও রসতত্ত্ব Ե Պ করিয়াছেন । শব্দের অভিধা এবং অর্থের লক্ষণা—এই দুইটি মাত্র ব্যাপার বা function-ই কাব্যজ্ঞসমাজে পরিচিত। এতদতিরিক্ত ‘ভাবনা’—যাহাকে ভট্টনায়ক ‘সাধারণীকৃতি’ বা universalisation বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন, এবং ভোগীকৃতি”–এইরূপ অপূর্ব শক্তিদ্বয়ের অস্তিত্ব তো সাধারণের অগোচর। ‘ভোগীকৃতি’ তো একপ্রকার প্রতীতি। তবে তাহার অপূর্ব নামকরণে কি ফল ? অার কাব্যবর্ণিত অর্থের সাধারণীকরণের উদ্দেশ্যে ভট্টনায়ক যে ভাবনাথ্য ব্যাপার স্বীকার করিয়াছেন—ঐরূপ ব্যাপার স্বীকার করিবারই বা কি এমন প্রয়োজন, যদি অন্য প্রকারে সাধারণীকরণ সম্ভবপর হইতে পারে ? স্বতরাং ভট্টনায়কের সিদ্ধান্ত গৌরবদোষদুষ্ট ও নানারূপ অপূর্ব শক্তি কল্পনার ফলে যুক্তির দিক দিয়া দুর্বল। ইহা ছাড়া আরও একটি বিষয়ে ভট্টনায়কের মতবাদের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা যাইতে পারে। আমরা দেখিয়াছি, ভট্টনায়কের মতে বিভাব এবং অমুভাবসমূহ যেমন আপন আপন বৈশিষ্ট্য ত্যাগ করিয়া দেশকালানিয়ন্ত্রিত সাধারণীকৃত রূপে সামাজিকের চক্ষে প্রতিভাত হইয়া থাকে, সেইরূপ রতি প্রভৃতি আস্তরভাবসমূহও যাহা নায়কেরই একান্ত নিজস্ব, তাহাও কাব্য ও নাট্যের ‘ভাবনা’ ব্যাপারের মহিমাবশে অকুরূপভাবে সাধারণীকৃত হইয়া সহৃদয় শ্রোতা ও দর্শকের চিত্তে সংক্রামিত হয় । ইহাকেই বলা হয় ‘হৃদয়সংবাদ’ | সুতরাং শ্রোতা বা দশকের স্বকীয় কোনও স্থায়িভাবের বাস্তব সত্তার অপেক্ষা নাই । আমার রতিরূপ স্থায়িভাবের সংস্কার বা বাসনা (impression) না থাকিলেও কোনও ক্ষতিই নাই । তথাপি আমি দুন্যস্তগত শকুন্তলাবিষয়ক রতিভাবের সাধারণীকৃত রূপের উপলব্ধি করিতে সমর্থ হইব, কোনও বাধাই থাকিবে না। ভট্টনায়কের মতবাদের ইহাই দুর্বলতা। শৃঙ্গার প্রভৃতি সাহিত্যিক রসামুভূতি যদি সহৃদয় শ্রোতা ও প্রেক্ষকের অস্তনিগুঢ় রতি প্রভৃতি তত্তং স্থায়িভাবের মৌলিক সত্তাকে অপেক্ষা না করে, যদি উহা সম্পূর্ণভাবে সহৃদয়ের আস্তরবাসনা নিরপেক্ষ হইয়া দাড়ায়, তবে ষে কোনও ব্যক্তি যে কোনও রসের উপলব্ধি