পাতা:সাহিত্য-মীমাংসা - বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য্য.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-মীমাংসা "ליל করিতে সমর্থ হইবে। একজন জরহ্মীমাংসক—যিনি জীবনেও যৌনরতির আস্বাদ অনুভব করেন নাই, যিনি আজীবন শুষ্ক বেদাধ্যয়ন ও বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানের দ্বারা লৌকিক সকল আসক্তি উন্মলিত করিবার জন্য তৎপর, তিনিও দুন্যস্ত-শকুন্তলার প্রণয়কাহিনী দর্শনে তুল্যভাবে শৃঙ্গাররসের আস্বাদন করিবেন ! কিন্তু তাহা তো হয় না। রতিবাসনাহীন ব্যক্তির নিকট প্রণয়ের মধ্যেও কোনও রস নাই, মাধুর্য নাই। অতএব স্বীকার করিতে হইবে, কোনও একটি বিশিষ্ট রসের অনুভূতির প্রতি সেই রসের অনুরূপ স্থায়িভাবের বাস্তব সত্তা নিয়ত অপেক্ষিত। নতুবা, রসাচুভূতি নিতান্ত অসম্ভব । যাহাদের চিত্তে রতিভাবের বাস্তব সংস্কার বিদ্যমান নাই, সেই সকল প্রেক্ষক রঙ্গালয়ের কাষ্ঠ, কুড্য, অশ্মখণ্ডের মতই শৃঙ্গাররসামুভূতি বিষয়ে চেতনাহীন, জড় । অভিনবগুপ্তের এই মতবাদের ফলে রসচর্বণ। অবাস্তব কাল্পনিকতার রাজ্য হইতে বাস্তব কার্যকারণতত্ত্বের দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হইল । রসতত্ত্বের কেন্দ্রস্থানীয় ব্যক্তি সহৃদয় সামাজিক, ইহা আমরা বারংবার উল্লেখ করিয়াছি । অতএব ভরতাচার্যের রসস্থত্রের ব্যাখ্যাও সেই দৃষ্টিভঙ্গী লইয়াই করিতে হইবে । বিভাব, অহুভাব, স্থায়িভাব, সঞ্চারিভাব—রসচর্বণার যত কিছু উপাদান বা কারণকলাপ, সে সকলেরই সমবায় সহৃদয়ের চিত্তে,—কেন না, সহৃদয়েই রসামুভূতির উদ্রেক ঘটিয়া থাকে । সুতরাং কার্য ও কারণের একাশ্ৰয়তা বজায় রাখিতে হইলে, রসাচুভূতির কার্যকারণতত্ত্ব বজায় রাখিতে হইলে, বিভাব প্রভৃতি কারণ ও রসাস্বাদরূপ কাযের আধারের অভিন্নত যাহাতে সংরক্ষিত থাকে, সে বিষয়ে তীক্ষু দৃষ্টি রাখিতে হইবে—ইহাই দার্শনিক যুক্তিসঙ্গত। কার্যকারণতত্ত্বের এই মূল নিয়ম, সামানাধিকরণ্য, (co-inherence), রসাস্বাদের স্থলে কি করিয়া অব্যাহত রাখা যায়? ‘রসাস্বাদ’—আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি,—সহৃদয় সামাজিকের আস্তর অমুভববিশেষ বা subjective feeling । কিন্তু রসামুভূতির যে সকল কারণ আমরা পরিগণন করিয়াছি,—বিভাব, আকুভাব, স্থায়িভাব এবং সঞ্চারিভাব,—তাহাদের