পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৪
সাহিত্য

লইবার জন্য এতই আকাঙ্ক্ষা। আবার ইহার উল্‌টাও আছে। হৃদয় আপনার ভিতরের আকাঙ্ক্ষা ও আবেগকে যখন বাহিরের কিছুতে প্রত্যক্ষ করিতে না পারে তখন অন্তত সে নানা উপকরণ লইয়া নিজের হাতে তাহার একটা প্রতিরূপ গড়িবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। এমনি করিয়া জগৎকে আপনার ও আপনাকে জগতের করিয়া তুলিবার জন্য হৃদয়ের ব্যাকুলতা কেবলই কাজ করিতেছে। নিজেকে বাহিরে প্রকাশ করা এই কাজেরই একটি অঙ্গ। সেইজন্য এই প্রকাশব্যাপারে হৃদয় মানুষকে সর্বস্ব খোয়াইতেও রাজি করিয়া আনে।

 বর্বর সৈন্য যখন লড়াই করিতে যায় তখন সে কেবলমাত্র শত্রুপক্ষকে হারাইয়া দিবার জন্যই ব্যস্ত থাকে না। তখন সে সর্বাঙ্গে রঙচঙ মাখিয়া চীৎকার করিয়া বাজনা বাজাইয়া তাণ্ডবনৃত্য করিয়া চলে; ইহা অন্তরের হিংসাকে বাহিরে মূর্তিমান করিয়া তোলা। এ না হইলে হিংসা যেন পূরা হয় না। হিংসা অভিপ্রায়সিদ্ধির জন্য যুদ্ধ করে; আর আত্মপ্রকাশের তৃপ্তির জন্য এই-সমস্ত বাজে কাণ্ড করিতে থাকে।

 এখনকার পাশ্চাত্যযুদ্ধেও জিগীষার আত্মপ্রকাশের জন্য বাজনা-বাদ্য সাজ-সরঞ্জাম যে একেবারেই নাই, তাহা নয়। তবু এই-সকল আধুনিক যুদ্ধে বুদ্ধির চালেরই প্রাধান্য ঘটিয়াছে, ক্রমেই মানবহৃদয়ের ধর্ম ইহা হইতে সরিয়া আসিতেছে। ইজিপ্টে দরবেশের দল যখন ইংরেজসৈন্যকে আক্রমণ করিয়াছিল তখন তাহারা কেবল লড়াইয়ে জিতিবার জন্যই মরে নাই। তাহারা অন্তরের উদ্দীপ্ত তেজকে প্রকাশ করিবার জন্যই শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত মরিয়াছিল। লড়াইয়ে যাহারা কেবল জিতিতেই চায় তাহারা এমন অনাবশ্যক কাণ্ড করে না। আত্মহত্যা করিয়াও মানুষের হৃদয় আপনাকে প্রকাশ করিতে চায়। এতবড়ো বাজে খরচের কথা কে মনে করিতে পারে!

 আমরা যে পূজা করিয়া থাকি তাহা বুদ্ধিমানেরা এক ভাবে করে,